দেশব্যাপী ধর্মঘটের তৃতীয় দিনে ঢাকার রাস্তায় প্রাইভেট কার ও রিকশার রাজত্ব
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুরু হওয়া দেশব্যাপী ধর্মঘটের আজ তৃতীয় দিন, যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে।
ঢাকার রাস্তায় প্রাইভেট কার, রাইড-শেয়ারিং মোটরবাইক ও রিকশার আধিক্য চোখে পড়ছে, যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া। মিরপুর, ফার্মগেট, বাংলামোটর ও শাহবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
শহরের রাস্তায় শুধু দুটি বেসরকারি কোম্পানির বাস ও রাষ্ট্রীয় বিআরটিসি'র বাস চলছে।
দূরের পথে যাতায়াতকারীরা দিশেহারা হয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর পরিবহন খুঁজছেন। এছাড়া, শনিবার সকালে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, এ অবস্থার সুযোগ নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া হাঁকছেন সিএনজি চালিত অটোরিকশা, রিকশা ও রাইড শেয়ারিংয়ের চালকরা।
মিরপুরে সকাল ৮টা থেকে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন সেলিম খান। পরে ২০০ টাকা রিকশা ভাড়ায় তার কারওয়ান বাজারের অফিসে যান তিনি।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "আমি অন্যান্য দিনের চেয়ে দুই ঘণ্টা আগে বের হই, কিন্তু তারপরও বিআরটিসি বাসে উঠতে পারিনি। মনে হয় আমার মতো সাধারণ মানুষদের দুর্ভোগের কোনো সীমা নেই"।
মহাখালীতে অফিস সাইরা খাতুনের। আজ রিকশায় করে অফিসে গেছেন তিনি। তিনি জানান, আসল ভাড়ার চেয়ে দশগুণ ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে তার দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে।
আব্দুস সোবহানের অফিস ফার্মগেটে। পরিবহন ধর্মঘট চলমান থাকায় তাকে কমলাপুর থেকে উবারে করে ফার্মগেটে অফিস করতে আসতে হয়েছে।
সোবহান দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, 'এখন উবারেও ভাড়া বেড়ে গিয়েছে। বিআরটিসির জন্য প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে উবার ঠিক করে ফার্মগেট এসেছি। ভাড়া লেগেছে প্রায় ৬০০ টাকা, যেখানে আগে ৩০০-৩৫০ টাকা লাগত।'
নিজের ছেলের বাইসাইকেল চালিয়ে বাংলামোটরে অফিস করতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আবুল টিবিএসকে বলেন, 'আমার যা বেতন, সেখানে মোহাম্মদপুর থেকে রিকশা বা সিএনজি দিয়ে আসলে এর খরচ দিয়ে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাবে। তাই ছেলের সাইকেল নিয়েই বের হয়েছি।'
বিআরটিসির চালক নাজমুল টিবিএসকে বলেন, 'এত যাত্রী শুধুমাত্র বিআরটিসি বাস দিয়ে সামাল দেওয়া সম্ভব না। প্রায় ৬ মাস এ বাসটি ডিপোতে পড়ে ছিল, আজকে সকালে বের করলাম অল্প কিছু মেরামত করে।'
রাস্তায় এখন শুধু বিআরটিসির বাসই চলছে। কিন্তু যাত্রীর চাপে বিআরটিসির বাসে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এই বাস দেখলেই যাত্রীরা ওঠার জন্য ছুটে যাচ্ছিলেন। কিন্তু অনেকেই উঠতে ব্যর্থ হন। এ কারণে অনেক যাত্রীকে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে বিআরটিসি বাসেও ভাড়া নিচ্ছে দ্বিগুণ।
রিকশা চালক রহিম টিবিএসকে বলেন, মেইন রোডে আমার গাড়ি চালানো হয় না। পান্থপথে গলির মধ্যেই চালাই, কিন্তু গতকাল থেকে মেইন রোডে দূরের যাত্রীই পরিবহন করছি। অন্য দিনের থেকে গত দুদিন ধরে ইনকামও ভালো হচ্ছে। সবাই ভাড়া বাড়িয়ে নিচ্ছে, তাই আমিও নিচ্ছি।
আরেক রিকশাচালক বলেন, 'রিকশা চালানো গত দুই মাস ধরে বন্ধ রেখে ছোট একটা ব্যবসা করলেও বাস বন্ধ থাকায় আবার চালাচ্ছি। দিনে প্রায় দেড় হাজার টাকা উপার্জন হচ্ছে। তবে আজকে মেইন রাস্তায় রিকশা অনেক বেড়ে গিয়েছে, ফলে যানজটেও পড়তে হচ্ছে।
গত বুধবার রাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। এ ঘোষণার পর ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে শুক্রবার থেকে সারা দেশে বাস, ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন মালিকেরা। এতে সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে।