ধানের বাম্পার ফলনে মাজরা পোকার থাবা
চলতি বোরো মৌসুমে কক্সবাজারের প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা বিআর-২৮ জাতের ধান লাগিয়ে প্রচুর ফলন পেয়েছেন। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই ধান কাটার কথা। কিন্তু পাকা ধান কাটার আগেই কৃষকের স্বপ্ন ধুলিস্মাত করছে 'মাজরা' নামে এক পোকা। পোকার আক্রমণে ধূসর হয়ে গেছে একরের পর একর পাক ধানের ক্ষেত। এতে অন্তত কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে জানিয়েছেন অসংখ্য ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক।
কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল কাওয়ারপাড়ার মৃত আজম উল্লাহ সিকদারের ছেলে কৃষক আবু ছৈয়দ ও মৃত ইদ্রিস মিয়ার ছেলে মুহিবুর রহমান জানান, কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে গত ডিসেম্বরে তারা জনপ্রতি তিন কানি জমির জন্য এক হাজার ১৪০ টাকা দিয়ে তিন বস্তা বিআর-২৮ ধানের বীজ কিনেছিলেন।
তারা জানান, পরবর্তী সময়ে বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে দীর্ঘ তিন মাস অর্ধ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে অনেক যত্নে ধানের বাম্পার ফলন ফলান। করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউনের এ দুর্ভোগেও অধিক ফলন দেখে তারা আশার বুক বাধেন। কিন্ত গত ক'দিন ধরে মড়কে পড়ছে দেখে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে মোরশেদুর রহমান নামে এক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের যথাযত তদারকি না থাকায় কক্সবাজারের আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য নেই এমন জাতের ধান কৃষকরা ফলিয়েছেন। অল্প সময়ে অধিক ফলন পাওয়ার কথা জেনে পরীক্ষামূলক গবেষণা ছাড়াই সরাসরি কৃষকের মাঝে বিআর-২৮ বীজ বিক্রি করা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। ধান পাকা দেখলেও ফলন ঘরে তোলার আগেই জমিতে পোকার আক্রমনের এ দৃশ্য কৃষক পরিবারগুলোতে করোনার লকডাউনে মরার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
খুরুশকুলের রাখাইনপাড়ার নিকটবর্তী সেচ পাম্পের মালিক ওমর হাকিমের দুই একর, স্থানীয় ফকিরপাড়ার অ্যাডভোকেট সাইফুল্লাহ নুরের এক একরসহ শুধু খুরুশকুলেই অন্তত ৫০ একর জমির ধান পোকায় নষ্ট করেছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় মনোপাড়ার কৃখশ আবু ছৈয়দ।
খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন বলেন, আমার ইউনিয়নের ৫০ থেকে ৬০ একর জমিতে এই পোকার আক্রমন হয়েছে বলে জেনেছি। অন্যান্য এলাকাতেও এ পোকার আক্রমন হয়েছে বলে খবর এসেছে। একর প্রতি এক লাখ টাকা করে ক্ষতি হলে প্রায় কোটি টাকা লোকসানের শঙ্কা রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র মতে, কক্সবাজার জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে এবার বিআর-২৮ জাতের ধান লাগানো হয়েছে। স্বল্প সময়ে এ জাতের ধানের ক্ষেতে ফলন এসেছে প্রচুর। যারা নিয়ম জানেন তারা সঠিক সময়ে সঠিক কীটনাশক প্রয়োগ করায় ক্ষেতে পোকার আক্রমণ লাগেনি।
কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কাশেম জানান, বিআর-২৮ জাতের ধানের ভাত খেতে সুস্বাদু আর স্বল্প সময়ে ফলন আসে। কিন্তু পরিবেশের সঙ্গে এখন সহজে খাপ না খাওয়ার কারণে এটি চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হয়। এরপরও সহজে অতিফলনের আশায় অনেক কৃষক জোরাজুরি করে এ জাতটি চাষ করছেন। যারা নিয়মিত উপদেশ মেনে চলেন, তারা পোকার আক্রমণ থেকে ফলন রক্ষা করতে পারেন। যারা অবহেলা করেন তারা ক্ষতির মুখে পড়েন।
তিনি আরও বলেন, খুরুশকুলসহ অন্য এলাকায় পোকার আক্রমণের কথা জানতে পেরে সংশ্লিষ্টদের সেসব এলাকা পরিদর্শনে পাঠানো হয়েছে। ফলন ঠিক রাখতে কোন গ্রুপের কিটনাশক ছিটানো দরকার তা সংশ্লিষ্ট কৃষকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।