ধ্বংসপ্রাপ্ত বন পুনরুদ্ধারে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা
বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরের ধ্বংসপ্রাপ্ত বন পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করছে রোহিঙ্গা সদস্যরা।
রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেওয়ার কয়েকমাসের মধ্যে অবকাঠামো তৈরির জন্য সেখানকার অসংখ্য গাছ কেটে ফেলা হয়। এছাড়া রান্নার জ্বালানি সংগ্রহের জন্যও গাছ কাটতে হয় সেখানকার বাসিন্দাদের। ফলে কিছু দিনের মধ্যে পাহাড়ি বনাঞ্চল উজাড় হয়। বন্যার কারণে ভূমিধসের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ প্রায়ই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় ও বন্যার কারণে দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। রোহিঙ্গাদের আবাসনের জন্য গাছ কেটে ফেলায় দুর্যোগের তীব্রতা বেড়েছে, যা কক্সবাজারে বসবাসকারী বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উভয়কেই হুমকির মুখে ফেলেছে।
এদিকে জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় রোহিঙ্গা শিবিরে পানি ওঠে। এমনকি পাহাড় ধসের খবরও পাওয়া গেছে। অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রও ডুবে যায়। এ কারণে এ বছর প্রায় ২৪ হাজার শরণার্থী তাদের বাড়িঘর ত্যাগ করতে বাধ্য হন। ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে প্রাণ হারান বহু শরণার্থী।
এসব ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য জাতিসংঘের হাই কমিশনার এবং তাদের অংশীদাররা ২০১৮ সালে বন পুনরুদ্ধার করতে দেশীয় প্রজাতির গাছ, গুল্ম এবং ঘাস রোপণের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পাহাড়ে করার জন্য যাত্রা শুরু করে।
তিন হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের গাছের নার্সারি পরিচালনা, চারা রোপণ ও যত্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পাশাপাশি গাছ লাগানোর কার্যক্রমও চলে।
গত তিন বছর ধরে বৃক্ষরোপণ প্রকল্পের সঙ্গে কাজ করছেন মোহাম্মদ আলী (২৮) নামে একজন রোহিঙ্গা। তিনি প্রতিদিন গাছের চারার যত্ন নেন, পানি দেন ও ভূমিধসের ফলে যেসব গাছ হেলে যায় বা উপড়ে পড়ে সেগুলোর পরিবর্তে নতুন বৃক্ষ রোপণ করেন। এছাড়া বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বন রক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যেও সচেতনতা তৈরি করছেন তিনি।
ঘনবসতিপূর্ণ শিবিরটিতে প্রায় ৯ লাখ শরণার্থীর আবাসস্থল, যাদের বেশিরভাগই মিয়ানমারে সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে পালিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছে।
কক্সবাজারে জাতিসংঘের হাইকমিশনারের জ্বালানি ও পরিবেশ ইউনিটের সাথে কাজ করা আব্দুল মালেক বলেন, "তিন বছর পর শিবিরসহ আশেপাশের স্থানগুলো অনেকটা সবুজ লাগছে"।
তিনি আরও বলেন, "পোকামাকড়, পরাগায়নকারী ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী ফিরে আসছে। গাছ ছায়া দিচ্ছে এবং শিবিরের শরণার্থীরা উন্নত জীবনযাত্রা উপভোগ করছে। এখন আমাদের লক্ষ্য সবুজায়ন রক্ষা করা। গাছ রক্ষার্থে আরও শরণার্থীদের নিযুক্ত করার চেষ্টা করছি'।
এ বিষয়ে রোহিঙ্গা মোহাম্মদ আলী বলেন, "শুধু গাছ লাগানোই যথেষ্ট নয়। তাদের যত্নও নিতে হবে। গাছগুলোকে আমরা যে কোনও ক্ষতিা থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করব। যদি কেউ গাছ নষ্ট করার চেষ্টা করে, আমরা তাদের বোঝাব।
- সূত্র: ইউএনএইচসিআর