নদীর তীরেই ঘুরছে মিয়ানমার হতে আসা দুই হাতি
কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীর তীরে উঠে আসা দুটি হাতি দু'দিন ধরে নদীর তীরেই ঘুরছে। এ হাতি দুটো শুক্রবার ভোরে টেকনাফ নেটং পাহাড়ের কাছাকাছি পৌরসভার জালিয়াপাড়া এলাকায় নাফ নদীর প্যারাবনে দেখতে পাওয়া যায়। অনেকে বলছেন, শনিবার বনবিভাগ ও রেস কিউ টিম কর্তৃক পাহাড়ের দিকে নিয়ে যাওয়া হাতি দুটি পুনরায় নদীর তীরে ফিরে এসেছে। আবার বন সংশ্লিষ্টদের মতে, টেকনাফের মুল পাহাড় থেকে ১৪-১৫ কিলোমিটার দূরে শাহপরীরদ্বীপের নদী তীরে যেতে গেলে হাতি দুটির একাধিক গ্রাম অতিক্রম করা প্রয়োজন। বুনো হাতি এসব গ্রামে না ঢুকে সোজা নদীর তীরে কোন মতেই আসতে পারে না। হাতি দুটি সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম পাশের ঝাউবনে অবস্থান নেয়। এর আগে দিনের বেলা নদীর কিনারায় কিছু সময় ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে আবার কিছু সময় এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করেছে।
খাদ্যাভাবে হাতিদুটো দুর্বল হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা সচেতন মহলের। দ্রুত উদ্ধার করা না গেলে যে কোন সময় মারাও যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
হাতি দুটিকে বনে ফেরানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. হুমায়ুন কবির।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রবিবার দুপুর থেকে হাতি দুটিকে শাহপরীরদ্বীপ নাফনদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লোকজন। এরপর হাতিগুলো এখানে-সেখানে ঘুরছিল।
এর আগে, শুক্রবার ভোরে দুটি হাতিকে টেকনাফ নেটং পাহাড়ের কাছাকাছি পৌরসভার জালিয়াপাড়া এলাকায় নাফ নদীর প্যারাবনে দেখতে পাওয়া যায়। পরে বনবিভাগ ও এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা একদিন পর শনিবার সন্ধ্যায় হাতি দুটিকে বনের অভ্যন্তরে ঢুকিয়ে দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, রাতে হাতি দুটি ফের বন থেকে বের হয়ে নাফদীর প্যারাবনে ফিরে আসে।
টেকনাফ রেঞ্জ কর্মকর্তা আশিক আহমেদ জানান, হাতিগুলো মিয়ানমার হতে নাফ নদী সাঁতরে টেকনাফের কূলে ভিড়েছে। গতবছরও একইভাবে আরো একটি হাতি নদী পার হয়ে এপারে এসেছিল।
টেকনাফ সদর সিবিজি সভাপতি মাহমদুল্লাহ জানান, গত রবিবার টেকনাফ থেকে অন্তত ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে শাহপরীর দ্বীপ নাফ নদীর কিনারায় অবস্থান নেয় হাতি দুটি। সেদিন রাতে সিবিজি'র ২১ জনের একটি টিম হাতি দুটিকে সারারাত পাহারা দিয়ে রাখে।
এদিকে, শাহপরীর দ্বীপ ঘোলার চর সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দারা হাতির আক্রমণের ভীতিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন। তাদের ধারণা, হাতিগুলোকে দ্রুত উদ্ধার করা না গেলে নাফ নদী সাঁতরে মিয়ানমার চলে যাবারও সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘোলার চরের কয়েক জন জেলে জানিয়েছেন, হাতি দুটি খাদ্যাভাবে ক্রমশ দুর্বল হয়ে গেছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত কাদার মধ্যে খুবই দুর্বলভাবে দাঁড়িয়ে ছিল প্রাণিদুটো। আরো দুর্বল হয়ে গেলে কাদা ও জোয়ারে পানি থেকে কূলে উঠানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, 'এ হাতি দুটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বলছে, গতকাল নাফ নদী সাঁতরে হাতিগুলো শাহপরীরদ্বীপে উঠেছে। টেকনাফের পাহাড় হতে ১৪-১৫ কিলোমিটার দূরে শাহপরীরদ্বীপ নদীর পারে হাতি গেলে কয়েকটি পাড়া অতিক্রম করতে হয়। সেক্ষেত্রে কেউ না কেউ হাতিগুলো দেখতে পেত। সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বশেষ খবরে হাতিগুলো শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিম তীরের সাগরকুলের ঝাউবনে ঢুকে আছে৷ জায়গাটি উপকূলীয় বনবিভাগের। হাতিগুলোকে যেকোন ভাবে মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন বনে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। আতংক একটাই, বুনো এ হাতি দুটোকে শাহপরীরদ্বীপ হতে টেকনাফের মূল বনে দীর্ঘ ১৪-১৫ কিলোমিটার পথ আনতে গিয়ে কোন পাড়ায় ঢুকে গেলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। এ নিয়ে আমরা সবাই বিচলিত'।