নিবন্ধনের তুলনায় দেড় কোটির বেশি টিকার ঘাটতি
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিতে মানুষের আগ্রহ বাড়ায় প্রতিদিনই বাড়ছে ভ্যাকসিন পেতে নিবন্ধনের সংখ্যা। কিন্তু নিবন্ধনের তুলনায় দেশে বর্তমানে ভ্যাকসিনের ঘাটতি দেড় কোটির বেশি। নিবন্ধনকৃত ব্যক্তিদের সময়মত ভ্যাকসিন দেয়াই এখন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ। এরই মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করতে আগামী ১২ আগস্ট থেকে সারাদেশে মডার্নার টিকার প্রথম ডোজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, করোনাভাইরাসের টিকার জন্য এখন পর্যন্ত তিন কোটির বেশি মানুষ নিবন্ধন করেছে। এর মধ্যে মাত্র এক ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছে ১ কোটি ৪৪ লাখ মানুষ। আর দুই ডোজ নিয়েছেন ৪৮ লাখ মানুষ। মঙ্গলবার রাতে কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া ১৭ লাখ ডোজসহ সরকারের হাতে আছে আছে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এ মাসে আমরা এক কোটির মত টিকা পাবো। সিনোফার্ম ও কোভ্যাক্স থেকে আমরা টিকা পাবো। আগামী মাসেও এক কোটির মত টিকা দেশে আসবে। তবে সবকিছু নির্ভর করবে বৈশ্বিক পলিটিক্সের ওপর। আশা করছি ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমে কোন সমস্যা হবেনা।"
নিবন্ধতকৃতদের টিকা নিশ্চিত করতে বয়স্কদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানান অধ্যাপক খুরশীদ আলম।
তিনি বলেন, "৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে করোনায় মৃত্যু বেশি। তাই আমরা এখন প্রায়োরিটি বেসিসে বয়স্ক ও গ্রামের মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার কথা ভাবছি। তবে এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।"
১০ আগস্ট কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা শামসুল হক স্বাক্ষরিত এক নোটিশে নোটিশে বলা হয়, "১২ আগস্টের পর সারাদেশে মডার্নার ফার্স্ট ডোজ ভ্যাকসিন বন্ধ করে দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ শুরু করতে হবে। ১২ আগস্টের পরও যেসব সেন্টারে মডার্নার ভ্যাকসিন উদ্বৃত্ত থাকবে তারা যেনো দ্রুত ১ম ডোজের ভ্যাকসিন দেয়া শেষ করে ২য় ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করে।"
এছাড়া ১৪ আগস্ট থেকে সারাদেশে আবশ্যিকভাবে সিনোফার্মের ২য় ডোজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
দেশে বর্তমানে যে ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন রয়েছে তা থেকে আগামী ১২ আগস্টের পর মর্ডানার প্রায় ২৪ লাখ ডোজ টিকা রেখে দেয়া হবে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার জন্য। এছাড়া ফাইজারের ৩৩ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে শুধু দ্বিতীয় ডোজ। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৮ লাখ ভ্যাকসিনও দেয়া হচ্ছে শুধু দ্বিতীয় ডোজ। সিনোফার্মের ভ্যাকসিন হাতে রয়েছে মাত্র ৩০ লাখ ডোজ। যদিও এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে ৬৮ লাখের বেশি মানুষ।
এদিকে, টিকার ক্যাম্পেইনে ৬ দিনে ৩২ লাখ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু গণটিকা দেয়ার প্রথম তিনদিনই ৪৭ লাখ মানুষ।
সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, "আগামী ১৫ অগাস্টের মধ্যে করোনাভাইরাসের আরও ৫৪ লাখ টিকা দেশে আসবে। এছাড়া চীন থেকে কেনা আরও ৫০ লাখ টিকা আসবে এ মাসে।"
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, "চীন সেপ্টেম্বরে ১০-১৫ মিলিয়ন, অক্টোবরে ২৩ মিলিয়ন আর নভেম্বরে ২৩ মিলিয়ন টিকা দেবে। পাশাপাশি কোভ্যাক্সের ভ্যাকসিন আসবে। ছয় মিলিয়ন ফাইজারের টিকাও পাওয়ার কথা সেপ্টেম্বরে। আমরা আশা রাখি ভারতের কাছে যে টিকা রয়ে গেছে, তাও পাব। কিন্তু এখনও কোনো রকমের কনফার্ম তারিখ তারা দেয়নি।"
সরকারের কেনা, উপহার পাওয়া এবং কোভ্যাক্সের মাধ্যমে পাওয়া টিকা মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে এসেছে ২ কোটি ৭৩ লাখের বেশি টিকা।