নিহত কর্মীদের প্রতিজনের ‘রক্তের বদলে’ ১০০ উটের দাম চায় হেফাজত
চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশ ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হেফাজত কর্মীদের জন্য সরকারের কাছে ক্ষতিপুরণ দাবি করেছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা।
প্রতিজন হেফাজত কর্মীর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০০ টি উটের সমপরিমাণ মূল্য দাবি করেছে তারা।
পৃথক সংঘর্ষে নিহত ২০ নেতাকর্মীর 'রক্তের বদলা' হিসেবে টাকার অংকে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
শুক্রবার চট্টগ্রামের হাটহাজারী ডাক বাংলো চত্বরে এক প্রতিবাদ সমাবেশে হেফাজত নেতারা এ দাবি করেন। দেশব্যাপী সংঘর্ষে কর্মী নিহতের ঘটনায় হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারী উপজেলা শাখা এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, "গত শুক্র, শনি ও রোববার সারা দেশে যেসব হেফাজতের নেতা-কর্মীরা শহিদ হয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ সরকারকে দিতে হবে। ছাত্রলীগ, পুলিশের হামলায় হেফাজতের যেসব নেতাকর্মী আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসা দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। সারাদেশে হেফাজত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা মামলা দায়ের হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করে নিতে হবে।"
এসময় তিনি দাবি করেন, ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পুলিশ পরিকল্পিত ভাবে মাদ্রাসা ছাত্রদের উপর গুলি চালিয়েছে।
তিনি বলেন, "যারা থানায় পাথর নিক্ষেপ করেছে তারা মাদ্রাসা ছাত্র তার প্রমাণ কী? সেখানে আরও অনেক লোক ছিলো। কিন্তু পুলিশ রাস্তায় নেমে ছাত্রদের উপর সরাসরি গুলি চালিয়েছে। পুলিশ কেন গুলি করলো? এগুলো পরিকল্পিত চক্রান্ত।"
এর আগে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংঘর্ষে কর্মী নিহতের ঘটনায় প্রায় ৪০ কোটি টাকার 'ক্ষতি'র হিসাব দেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর ব্যাক্তিগত সহকারী ও হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারী উপজেলা শাখার সহ-প্রচার সম্পাদক ইনামুল হক ফারুকী।
ফারুকী বলেন, "বিনা কারণে পুলিশ গুলি চালিয়ে হেফাজত নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। এ জন্য সরকারকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। একজন ব্যাক্তিকে বিনা কারণে হত্যার ইসলাম সম্মত ক্ষতিপূরণ হলো ১০০ উট বা সমপরিমাণ অর্থ। বর্তমানে বাংলাদেশ একটি উটের দাম ২ লাখ টাকা। সে হিসেবে ১০০ টি উটের দাম প্রায় ২ কোটি টাকা। ২০ জন শহিদের ক্ষতিপূরণের মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এ ক্ষতিপূরণ অবশ্যই সরকারকে দিতে হবে।"
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ন মহাসচিব নাসির উদ্দীন মুনীর বলেন, "যারা ২০ জন মানুষ নিহত হওয়ার পরে হেফাজত নিয়ে যারা কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রাখছেন তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সাথে যারা শাহদাত বরণ করেছে তাদের ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। এবং যদি তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া না হয়, আগামীতে হেফাজতের কোনো কর্মসূচিতে বাঁধা দেওয়া হয় তাহলে আমরা উপযুক্ত জবাব দেবো ইনশাআল্লাহ।"
"আর যদি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কোনো কর্মসূচি দিতে বাঁধা দেওয়া হয়, পেটুয়া বাহিনী লেলিয়ে দেয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশকে একটি কসাইখানায় রুপ দেওয়া হবে।"- বলেও মন্তব্য করেন নাসির উদ্দীন মুনীর।
এদিকে হেফাজতের এই বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে শুক্রবার জুমার নামাজের পর চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এ কারণে সড়কটিতে প্রায় দুই ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ ছিলো। ফলে আবারও দুর্ভোগ পোহান এই সড়কে যাতায়াতকারী হাজার হাজার যাত্রী।
এর আগে গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমনকে কেন্দ্র করে হাটহাজারীতে হেফাজত ও পুলিশের সংঘর্ষে গুলিতে চারজন নিহত হন। সেদিন থেকে ছাত্ররা হাটহাজারী মাদ্রাসা গেটে অবস্থান নিয়ে দেয়াল তুলে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করে রাখে। তিনদিন পর প্রশাসনের অনুরোধে তারা সেই দেয়াল তুলে নিলে স্বাভাবিক হয় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক।