নেত্রকোনার কারও নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না তিনদিন
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাবের পর্যাপ্ত সক্ষমতার অভাবে তিনদিন ধরে নেত্রকোনার করোনা উপসর্গে আক্রান্ত রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। এ কারণে জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণে সমস্যা দেখা দিয়েছে। দ্রুত রোগী শনাক্ত করতে নেত্রকোনায় একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাবে স্থাপিত পিসিআর মেশিনে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলা ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুরের পাশাপাশি সুনামগঞ্জের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ মেশিনে প্রতিদিন দুইবারে গড়ে ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু পাঁচ জেলা থেকে প্রতিদিন নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে আরও অনেক বেশি। এ কারণে যেদিনের সংগৃহীত নমুনা সেদিন পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। কোনো কোনো জেলার নমুনা পরীক্ষা তিনদিনেও একবার হচ্ছে না।
বুধবার নেত্রকোনার অল্পকিছু নমুনা পরীক্ষা করা হয়। বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত নেত্রকোনার বিশেষ প্রয়োজনীয় দু-একটি ছাড়া আর কোনো নমুনাই পরীক্ষা করা হয়নি।
বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডা. সালমা আহমাদ। তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমাদের ল্যাবে ৭ শ'র বেশি নমুনা জমা হয়ে রয়েছে। কিন্তু আমরা দিনে দুইবারে ১৮৮টির বেশি নমুনা পরীক্ষা করতে পারছি না।
বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পিসিআর মেশিন দিয়ে পৃথক আরেকটি ল্যাব চালু করার কথা থাকলেও সেটি এখনো চালু হয়নি।
নেত্রকোনার সিভিল সার্জন ডা. তাজুল ইসলাম খান বলেন, আমরা প্রতিদিন জেলার ১০ উপজেলা থেকে শতাধিক নমুনা পরীক্ষা করে পাঠাচ্ছি। এখনো আমাদের ৫৭২টি নমুনা জমা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু গত তিনদিন ধরে আমরা নমুনা পরীক্ষার কোনো রিপোর্ট পাচ্ছি না। এ কারণে রোগী শনাক্তকরণে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত নেত্রকোনার ৯ উপজেলায় ৩৩ জন রোগী সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন সুস্থ হয়েছেন। বাকিরা স্বাস্থ্যবিভাগের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়ায় মঙ্গলবারের পর শনিবার বিকাল পর্যন্ত আর কোনো রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না, তা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।
নেত্রকোনায় একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নেত্রকোনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. আহসানুল কবীর রিয়াদ বলেন, নেত্রকোনা সদরের অনন্তপুর গ্রামে বেসরকারি সংস্থা ডেমিয়েন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত 'যক্ষা ও কুষ্ঠ ক্লিনিক'-এ একটি পিসিআর মেশিন রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় লোকবল ও কিটসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করলে ওই মেশিন দিয়ে একটি ল্যাব চালু করা সম্ভব।
মেশিনটির সাহায্যে প্রতিদিন ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা যাবে বলে জানান তিনি।
নাগরিক সংগঠন 'জনউদ্যোগ'-এর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্যামলেন্দু পাল বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত শনাক্তকরণের জন্য নেত্রকোনায় একটি পিসিআর ল্যাব চালু করা জরুরি। যক্ষা ও কুষ্ঠু ক্লিনিকের মেশিনটি দিয়ে ল্যাব চালুর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।