নোয়াখালীতে গৃহবধূ ধর্ষণ মামলায় দুই আসামির যাবজ্জীবন
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুরের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী দেলোয়ার হোসেন দেলু ও তার সহযোগি মোহাম্মদ আলী প্রকাশ আবু কালামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে দুই আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এ রায়ে বাদী ও তার আইনজীবী সন্তুষ্ট হলেও রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী।
সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক জয়নাল আবেদীন এ রায় ঘোষণা করেন। মাত্র ১৩ কার্য দিবসের মধ্যে এত দ্রুত কোনো মামলার রায় সাম্প্রতিক সময়ে নোয়াখালীতে এটাই প্রথম।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার দুই আসামি দেলোয়ার হোসেন দেলু ও তার সহযোগী মোহাম্মদ আলী প্রকাশ আবু কালামের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত। পরে গত ১৮ আগস্ট আসামিদের উপস্থিতিতে বাদির স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
এ মামলায় বাদী পক্ষে ১২ জন ও আসামি পক্ষে ৩ জন সাফাই সাক্ষীসহ মোট ১৫ জনের স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হয়। এর আগে ২০২০ সালে ১৪ ডিসেম্বর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে অভিযোগপত্র ফরোয়ার্ড করা হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মামলার বাদী ওই গৃহবধূ বলেন, 'এ রায়ে আমি এবং আমার পরিবার সন্তুষ্ট। একইসঙ্গে আমার আরও দুটি মামলাও (নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি) যেন সঠিক বিচার হয়, সেই দাবি করছি। রায়ের পর আসামি পক্ষের লোকজন আমাদের ওপর বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করবে, তাই প্রশাসনের কাছে আমি ও আমার পরিবারের নিরাপত্তা চাচ্ছি।'
এ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন বাদল বলেন, 'শুধুমাত্র বাদীর সাক্ষীর ভিত্তিতে আমার আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব। আশা করি উচ্চ আদালত থেকে তাদের জামিন হবে।'
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ লাবলু বলেন, 'আলোচিত গৃহবধূ ধর্ষণ মামলাটিতে আমরা বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষী উপস্থাপন, জেরা ও জবানবন্দি সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ে আমরা এবং সারা দেশের মানুষ সন্তুষ্ট।'
বলে রাখা ভালো, ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাতে ওই নারীর প্রাক্তন স্বামী তার সঙ্গে দেখা করতে তার বাবার বাড়ি একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে এসে তাদের ঘরে ঢুকেন। বিষয়টি দেখতে পেয়ে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন দেলু রাত ১০টার দিকে নিজ দলের লোকজন নিয়ে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে পর পুরুষের সঙ্গে অনৈতিক কাজ ও তাদের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে পিটিয়ে নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন আসামিরা। এর আগে ওই গৃহবধূকে ঘরে ও বিভিন্ন স্থানে নিয়ে দেলোয়ার একাধিকবার ধর্ষণ করেন।
ওই বছরের ৪ অক্টোবর দুপুরে নির্যাতনের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে এ ঘটনায় নির্যাতিতার দায়েরকৃত নির্যাতন, ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলা অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়।
ধর্ষণ মামলায় দেলোয়ার হোসেন দেলুকে প্রধান আসামি ও ধর্ষণে সহযোগিতা করায় আবু কালামকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন ওই গৃহবধূ।