পাঁচ বছরেও ‘সংকট ঘুচেনি’ রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের
প্রতিষ্ঠার ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষা কার্যক্রম ও রোগীদের সেবায় দৃশ্যমান উন্নতির ছোঁয়া এখনো লাগেনি রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা বলছেন, হাসপাতাল থেকে ঠিক মতো সেবা পাচ্ছেন না তারা।
তবে সেটা স্বীকার করে নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বলছে, নানা সংকটের কারণে হাসপাতালের শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. টিপু সুলতান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “বর্তমানে ৫টি ব্যাচে ২৫০ জন শিক্ষার্থী এই মেডিকেল কলেজে পড়াশুনা করছেন। প্রথম ব্যাচের ৫০জন ডাক্তার হয়ে আগামী নভেম্বরে বের হবে। তবে তাদের ইন্টার্ন করার পরিবেশ তৈরি করা যায়নি এই হাসপাতালে। মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজও শুরু হয়নি।”
‘‘নানা সংকটের মধ্য দিয়ে মেডিকেলের শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। শুধু রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা নয়।’’
অধ্যক্ষ্যের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অবকাঠামোর অভাবে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা হাতে কলমে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে তারা ব্যাবহারিক ক্লাস করতে পারছে না।
একশো শয্যার রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের অবকাঠামোকে কেন্দ্র করে ২০১৫ সালে ১০ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতালের একটি ভবনে গড়ে তোলা হয় অস্থায়ী ক্যাম্পাস। পরে আর নতুন কোনো অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। বাড়েনি সেবার মান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মেডিকেল কলেজে সকল বিভাগ চালু থাকলেও এসব বিভাগের ডাক্তারগণ হাসপাতালে সেবা দেন না। মেডিক্যাল কলেজের ক্লাস শেষ করে ডাক্তাররা চট্টগ্রামে চলে যান। রাঙামাটির কোনো রোগীকে যেকোন অপারেশনের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়।
তবে স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একীভূত হওয়ায় মেডিকেল কলেজের ডাক্তাররা জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের ‘সেবা দিতে বাধ্য’।
রোগী ও স্বজনরা বলছেন, দুপুরের পর ডাক্তার পাওয়া যায় না হাসপাতালে। এতে সবচেয়ে বেশী দুর্ভোগে পড়েন প্রসূতি নারীরা।
জেলার নানিয়াচর থেকে রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা সেবার জন্য আসা মো. হালিম (৪৫) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘‘ভাগিনার গলার সমস্যা নিয়ে মেডিকেলে আসলাম। এখন এ চিকিৎসার জন্য ভাগিনাকে চট্টগ্রামে রেফার করা হয়েছে।’’
রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের একজন চিকিৎসক নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘‘রোগীরা প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছে না এটি ঠিক। তবেও এটাও সত্য যে, মেডিকেলের ডাক্তাররা জেনারেল হাসপাতালে বসে যে রোগী দেখবেন, সে পরিবেশ এখনও তৈরি করা যায়নি। হাসপাতালে ডাক্তাদের বসার কক্ষও নেই”
তিনি বলেন, ‘‘জরাজীর্ণ অপারেশন কক্ষে লাইট জ্বলে না ঠিকমত। এ সমস্যার মাঝে অপারেশন করে কোনো ডাক্তার বদনামের ভাগিদার হতে চায় না।’’
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শওকত আকবর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “যে লোকবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম আছে তা দিয়ে সাধ্যমত সেবা দিয়ে যাচ্ছি। মেডিকেল কলেজ হাসাপাতলের কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা হলে সেবার মান বাড়ানো সম্ভব হবে।’’
তিনি জানান, বর্তমানে হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা, আল্টাসনোগ্রাফি, এক্স-রে করা হয়, যা আগে ছিল না।