পাথর কোয়ারি খোলার দাবিতে সিলেটে তিন দিনের পরিবহন ধর্মঘট, দুর্ভোগে মানুষ
টানা তিনদিনের পরিবহন ধর্মঘটের কবলে পড়েছে সিলেট। সিলেটের বন্ধ থা্কা কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ধর্মঘটের কারণে বন্ধ রয়েছে সব ধরণের পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
এদিকে, অটোরিকশায় গ্রিল সংযোজনে পুলিশের নির্দেশনার বাতিলের দাবিতে ধর্মঘট পালন করছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকরা। ফলে জনসাধারণের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
ধর্মঘটের কারণে মঙ্গলবার সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। নগরের ভেতরে অটোরিকশা-লেগুনা চলাচলও বন্ধ রয়েছে। যানবাহন না থাকায় নগরের সড়কগুলো ছিলো একেবারে ফাঁকা। রিকশা ও মোটরসাইকেল ছাড়া সড়কে আর কোনো যানবাহন দেখা যায়নি।
মঙ্গলবার সকালে সিলেটের কদমতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, গাড়ির অপেক্ষায় আছেন বেশ কয়েকজন যাত্রী। দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে থেকেও কোনো বাস পাচ্ছেন না তারা।
এই এলাকায় কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা উজ্জ্বল রায়ের সাথে। তিনি বলেন, আত্মীয়ের অসুস্থতার জন্য জরুরী প্রয়োজনে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কুমিল্লা যাওয়ার জন্য টার্মিনালে এসেছিলাম। বাস না পেলেও মাইক্রোবাস পেলেও ভাড়া করে চলে যেতাম। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ বসেও কোনো গাড়ি পাইনি। ফলে এখন বাসায় ফিরে যেতে হচ্ছে।
বাস বন্ধ থাকায় সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ট্রেনের টিকিট না পেয়ে অনেক যাত্রীকেই হট্টগোল করতে দেখা যায়।
ট্রেনের টিকিট কিনতে আসা কলেজ ছাত্র মইনুল হক বলেন, জনসাধারণকে জিম্মি করে অযৌক্তিক দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে পরিবহন শ্রমিকরা। দ্রুত এমন কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
এদিকে ধর্মঘট সফল করতে সকাল থেকে নগরের বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়েছেন পরিবহন শ্রিমকরা। সিলেটের হুমায়ুন রশীদ চত্বর, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, উপশহর, সোবহানিঘাট, মদিনা মার্কেট, কুমারগাও, চন্ডপুলসহ কয়েকটি এলাকায় লাঠি হাতে অবস্থান নিয়েছেন তারা। শ্রমিকরা ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলেও বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।
ধর্মঘট আহ্বানকারীরা বলছেন, পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় সিলেটের ট্রাক মালিক-শ্রমিকরা গভীর সঙ্কটে পড়েছেন। এছাড়া জাফলং ও গোয়াইনঘাট সড়কে বাস-অটোরিকশার যাত্রীও অনেক কমে গেছে। ফলে সকলেই ক্ষুব্ধ। তাই পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে সকল পরিবহনের শ্রমিক-মালিকরা সম্পৃক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা এ ধর্মঘট চলবে বলে জানিয়েছেন তারা।
ধর্মঘট আহ্বানকারী সংগঠন সিলেট বিভাগীয় ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান মালিক ঐক্য পরিষদ ও সিলেট জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুল বলেন, দেয়াল পিঠ ঠেকে যাওয়ায় আমরা ধর্মঘট ডেকেছি। পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় ট্রাক মালিকরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। তাতে কাজ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে ধর্মঘট ডেকেছি। তিনদিনের ধর্মঘটেও পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হলে আমরা টানা ধর্মঘটে যাবো।
ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, দুএকটা ভুল বুঝাবুঝি হতে পারে। তবে আমরা ব্যক্তিগত গাড়ি ও জরুরী পরিসেবার গাড়ি চলাচলে বাধা দিচ্ছি না বরং সহায়তা করছি।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্লাহ বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘটের নামে বিশৃঙ্খলতা করলে কিংবা জনগনের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পরিবেশের বিপর্যয় ঠেকাতে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন টিলা, বিছনাকান্দি ও লোভছড়া- এই পাঁচ কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়। এরআগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বেলা)-এর দায়ের করা একটি রিটের প্রেক্ষিতে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোতে সব ধরণের যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে উচ্চ আদালত।