প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দেওয়া ঘর ‘ভাসছে’ পানিতে!
বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার একটি সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের সবগুলো নতুন ঘর পানিতে ওপরে ভাসছে। ফলে, গত কয়েকদিন ধরে সেখানে থাকা নয়টি পরিবার চরম দুর্ভোগে আছে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে এমন নিচু জায়গাতে ঘর করা নিয়ে স্থানীয় লোকজন কাজ শুরুর পর থেকেই আপত্তি তুলেছিলেন। তাদের দাবি ছিল, গৃহ নির্মাণে সমতল মাটির নিচে ইট ব্যবহার করেনি মিস্ত্রীরা। এ ছাড়া নিম্নমানের ইট, বালি, রড, কাঠ ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহারে অনিয়ম করা হয়েছে বলে জানান তারা। এ জন্য স্থানীয়রা তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা পারভীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন।
তবে সব বাধা উপেক্ষা করেই তৎকালীন ইউএনও সেখানে ঘর নির্মাণ করেন। উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নে পলিপাড়ায় পাশে খাসজমিতে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাবিটা প্রকল্পের অর্থায়নে মুজিব বর্ষে উপলক্ষে ১৫ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ব্যয়ে গৃহহীন ৯টি পরিবারের জন্য দুই কক্ষবিশিষ্ট এ সব ঘর তৈরি করা হয়।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আব্দুল জাব্বার, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রথম পর্যায়ে উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়ন খাস জমিতে উপজেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসে সার্বিক পর্যাবেক্ষণে নির্মাণ করা করা হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা হজুর আলী জানান, অল্প বৃষ্টিতে পানি ঘরে ঢুকে গেছে। রান্নাঘর, যাতায়াত রাস্তা, টিউবওয়েল, বাথরুম পানিতে ডুবে আছে।
বিষয়টির স্থায়ী সমাধানের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসকসহ প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ।
আয়শা বেগম জানান, "আমাদের ঘরবাড়ি নেই তাই প্রধানমন্ত্রী আমাগো ঘর দিছে। তিন দিন ধরে আমাদের ঘরে মধ্যে পানি ঢুকে গেছে। ৫ জন বিধবা মানুষ আমারা এখানে থাকি। পানি বন্ধ হয়ে প্রায় অনাহারে আছি। সাপ বা বিভিন্ন পোকামাকড় আক্রমণ করছে।"
ঘটনা ফেসবুকে দেখার পরপরই সকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন বগুড়ার শাজাহানপুর থানার ইউএনও আসিফ আহমেদ। ঘটনাস্থলে গিয়ে ইউএনও বলেন, প্রাথমিকভাবে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাদের স্থানান্তর করা হচ্ছে।পানি নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর এলাকায় মাটি কেটে জায়গাটা উঁচু করা হবে।
'প্রতিবাদ হয়েছিল তখন-ই' আমলে নেয়নি কেউ
শাজাহানপুর উপজেলায় ১৫ গৃহহীন পরিবারের কাছে ২৩ জানুয়ারি বাড়ি হস্তান্তর করা হয়। শাজাহানপুরেও নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, 'গৃহহীনদের জন্যে দুর্যোগ সহনীয় ঘরগুলো দুর্যোগ আসার আগেই বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাবে। খুব নিচু জায়গায় ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।'
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি ঘর তৈরিতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। নিচু ও জলাবদ্ধ জমিতে এসব গৃহ নির্মাণে সময় নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে।
এসব গোপন করতে কর্মসৃজন কর্মসূচির শ্রমিক দিয়ে ঘরের বাহিরে মাটি ভরাট করে ইটগুলো ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ঘরে নিম্ন মানের ইট ব্যবহার করার কারণে দ্রুত প্লাস্টার করা হয়েছে।
তবে প্রতিবাদ হলেও ইউএনও তার ক্ষমতাবলে তুলনামূলক নিচু জায়গাতেই ঘর নির্মাণ করে যান। তখন ইউএনও কারও ফোন ধরতেন না।
তবে এবার গণমাধ্যমকর্মীর ফোন ধরেছিলেন মাহমুদা পারভীন। জানালেন, ঘর পানিতে ভাসছে এমন বিষয় তো আমাকে এখনো কেউ জানায়নি। সুতরাং এ বিষয়ে আমি এখন কোনো মন্তব্য করতে পারব না।
২৩ জানুয়ারি জেলা প্রশসাক জিয়াউল হক বলেছিলেন, "অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া নেওয়া হবে।"
তবে ঘরগুলোর পানিতে ভাসমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে আজ বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বলেন, "ঘর নির্মাণ করার জন্য এমন নিচু জায়গা নির্ধারণ করা ঠিক হয়নি। যেহেতু ঘর হয়ে গেছে এখন তো বিকল্প উপায় বের করতে হবে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"