বগুড়ার বস্তা যাচ্ছে ভারতে, বছরে আয় ৩০০ কোটি টাকা
নারায়ণগঞ্জে বন্ধ হওয়া আদমজী জুট মিলের পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বন্ধ জুট মিলের যন্ত্রপাতি দিয়ে বগুড়ায় চালু করা পাটকলগুলোতে উৎপাদিত পণ্য যাচ্ছে ভারত ও সাউথ আফ্রিকার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে।
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন জানান, বগুড়ায় এখন সব মিলিয়ে পাটকল চলছে ২০টি। আর এসব পাটকলে কর্মসংস্থান হয়েছে অন্তত ১০ হাজার নারী-পুরুষের।
"বগুড়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির বিভিন্ন সময় যে তথ্য পেয়েছে তাতে বলা হয়েছে, বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার পাটজাত পণ্য বিশেষ করে বস্তা, সুতলি আর সুতা রপ্তানি হচ্ছে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে", বললেন মাসুদুর রহান মিলন।
বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ, শাহজাহানপুর ও কাহালু উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে গত ১০ বছরে ২০টি ছোট-বড় পাটকল প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎপাদিত বস্তা, চট, সুতলি আর সুতার বেশির ভাগ অংশই যাচ্ছে ভারত ও সাউথ আফ্রিকার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে।
ব্যবসায়ীরা এ সব তথ্য দিয়ে জানান, বগুড়ায় উৎপাদিত এসব পণ্যের চাহিদা রয়েছে থাইল্যান্ডেও।
বগুড়া সদর উপজেলার ইসলামপুর হরিগাড়ি এলাকায় প্রায় পৌনে দুইশ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১১ সালে চালু হয় হাসান জুট মিলস লিমিটেড। তারা প্রতিদিন গড়ে যে ৭৫ টন বস্তা, সুতলি ও সুতার উৎপাদন করে তার পুরোটাই রপ্তানি হয় ভারতে।
প্রতিষ্ঠানটির মালিক এ টিএম শাফিকুল হাসান জুয়েল এ তথ্য দিয়ে আরও জানান, কাহালুতে তার আরেকটি প্রতিষ্ঠান হাসান জুট এন্ড স্পিনিং মিলস লিমিটেড প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগ হয়েছে আরও ৭৫ কোটি টাকা। ওই পাটকলে উৎপাদিত ৩০টন পণ্যেরও সবটাই রপ্তানী হয় ভারতে। তার প্রতিষ্ঠানে এখন কাজ করছেন প্রায় ১৫শ নারী-পুরুষ।
"বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৮০ টন করে পাটজাত পন্য রপ্তানী হয় ভারতসহ বিভিন্ন দেশে'' বললেন এ টি এম শাফিকুল হাসান জুয়েল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যে সকল পাট ও পাটজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয় তা মানভেদে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা টন হিসেবে বিক্রি হয়ে থাকে।
শহরতলীর আকাশ তারা এলাকায় ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বগুড়া জুট মিলে শতাধিক লুমে প্রতিদিন উৎপাদন হয় ২০ টন পাটজাত পণ্য।
প্রতিষ্ঠানটির মালিক বিজয় বিহানী জানান, আমদজী পাটকলের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা যন্ত্রপাতি দিয়ে চালু করা মিলে উৎপাদিত পণ্যের সবটাই রপ্তানি হচ্ছে ভারত ও সাউথ আফ্রিকায়। জমির দাম বাদ দিয়ে এ পাটকলটি প্রতিষ্ঠায় ব্যএয় হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা।
"সরকারি সহযোগীতা পেলে বগুড়ায় উৎপাদিত পাটপণ্য থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশেও পাঠানো সম্ভব। প্লাস্টিকের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমায় আগামী এক বছরের মধ্যে ব্যবসা আরও ভাল হতে পারে", বললেন বিজয় বিহানী।
এ পাটকলে কমপক্ষে ৮শ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে দাবি করে বিজন বিহানী বলেন, বগুড়ায় এখন পাটকল আছে ১৬টি, যার অধিকাংশতেইপ্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গড়ে কাজ করছেন অন্তত পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ।
কাহালু উপজেলার দরগাহাটে প্রতিষ্ঠিত বগুড়া ভান্ডার জুট মিলস প্রতিষ্ঠায় ব্যয় হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। এ তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক তোফাজ্জল হোসেন জানান, তার প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন গড়ে ১০টন করে বস্তা তৈরি হয়।
''বাংলাদেশি বস্তার চাহিদা বেশি থাকায় অন্যান্যদের মতোই আমার প্রতিষ্ঠানে তৈরি বস্তার সবটাই রপ্তানী হচ্ছে ভারতে", যোগ করেন তিনি।
''এক সময় বগুড়ায় প্রতিষ্ঠিত জুটমিল থেকে পাটজাত পণ্য গেছে রাশিয়া এবং চীনে এখনও ওই দুই দেশে বাজার ভালো, তবে সরকারের কিছু পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ওই দুই দেশের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও বগুড়ায় উৎপন্ন পাটজাত পণ্য পাঠানো যাবে'',বললেনতোফাজ্জল হোসেন।
বগুড়া ভান্ডার জুট এন্ড টুয়াইন ইন্ড্রাষ্ট্রিতে অন্তত ৬শ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।