বগুড়া ও জয়পুরহাটে ঝড়-বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি
আম্পানসহ কয়েক দফা ঝড়, শিলাবৃষ্টি আর জলবদ্ধতায় বগুড়া ও জয়পুরহাটে বিপুল পরিমাণ বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগ এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে, যেন সরকার সুযোগ দিলে সহযোগিতা করা যায়।
বগুড়া ও জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি কৃষি বিভাগ জানায়, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল ও কালাইসহ ৫ উপজেলায় এলাকা তিন-চার দফা ঝড়, শিলাবৃষ্টি আর জলাবদ্ধতা পাকা বোরো ধানের পাশাপাশি কাঁচা ধানও নষ্ট হওয়া বড় অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস.এম. মেফতাহুল বারি জানান, কৃষি বিভাগে প্রাথমিক যে তথ্য এসেছে, তাতে বলা হয়েছে এলাকাভেদে ধানের ক্ষতি হয়েছে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত।
'আমার ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন এবং ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছি। এ দুটি কাজ শেষ হলে ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে', বললেন এস.এম. মেফতাহুল বারি।
তিনি আরও জানান, চার দফা ঝড়-বৃষ্টির পাশাপাশি জলাবদ্ধতা এবং ধান কাটার শ্রমিক না থাকায় ক্ষতি কিছুটা বেশি হয়েছে।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বাকরা গ্রামের চাষী আব্দুল মান্নান মিয়া জানান, ৫০ শতাংশ জমিতে বোরো চাষ করতে গিয়ে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। পুরো জমিই পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় শতভাগ ধান নষ্ট হয়ে গেছে দাবি চাষী আব্দুল মান্নান মিয়া।
'ঝড়-বৃষ্টির আগে জয়পুরহাটের অনেক এলাকাতেই প্রতি বিঘায় ধান পাওয়া গেছে ২৪ মণ পর্যন্ত; আর এখন সেখানে গড়ে পাওয়া যাচ্ছে ১২ মণ', বললেন একই গ্রামের আরেক চাষি মোঃ মহসীন।
জয়পুরহাটের চাষিদের দাবি, প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবার তাদের ধানের ফলন কমেছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মণ। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, বগুড়াতে ঝড়-বৃষ্টির পাশাপাশি জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়েছে কাঁচা-পাকা প্রচুর পরিমাণ বোরো ধান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আম্পানের আগে বগুড়ায় ৬০ শতাংশ ধান কাটা হলেও এখনো অনেক এলাকায় ৪০ শতাংশ ধান কাটা সম্ভব হয়নি।
বগুড়ার কাহালু উপজেলার পালপাড়া গ্রামের রামচন্দ্র মোহন্ত জানান, জলাবদ্ধতার কারণে তার দেড় বিঘা জমির পুরোটাই এখনো পানির নিচে ডুবে আছে।
'আমি ধান পেতাম ২৪ মণ; কিন্তু এখন চাষ খরচের ১৫ হাজার টাকার একটিও ফেরত আসবে না জমি থেকে', বললেন রামচন্দ্র মোহন্ত।
একই উপজেলার জামতলা গ্রামের আব্দুল কাদের জানান, তার ২ বিঘা জমির পুরোটাই পানিতে ডুবে আছে।
'আমি দুই বিঘা জমিতে ৪৫ মণ ধান আশা করেছিলাম; কিন্তু একটুও ধান পাব না এবার। বরং চাষ খরচ বাবদ ২০ হাজার টাকার পুরোটাই গেছে', বললেন আব্দুল কাদের।
কালাই উপজেলার পীরকুঞ্জ গ্রামের চাষি খোরশেদ আলম জানান, ধান কাটা-মাড়াইয়ে এখন প্রতি বিঘায় খরচ বেড়েছে গড়ে ২ হাজার টাকা। 'আগে যেখানে এক বিঘা জমির ধান কাটতে ৩ হাজার টাকা লাগত; এখন সেখানে লাগে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা', বললেন তিনি।
কাহালু উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আখেরুর রহমান জানান, জমিতে পানি থাকলেও চাষিরা ধান কাটা বন্ধ রাখেননি।
'কিছু কিছু এলাকায় জমিতে পানি থাকায় চাষিদের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে, তাই তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে, যেন সরকার আর্থিক সহযোগিতা করলে তাদের পাশে দাঁড়ানো যায়', বললেন মোঃ আখেরুর রহমান।