বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫ গুরূত্বপূর্ণ মুহূর্ত
সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের রাজধানীতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জগজিৎ সিং অরোরা সহ অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিলে সই করার ঘটনা ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্যও একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল।
৪৯ বছর আগের এ দিনটির পর থেকে ১৬ ডিসেম্বর ভারতেও বিজয় দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়।
পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য মুক্তিবাহিনীর অসংখ্য যোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল ভারত। ২৫শে মার্চ রাতের গণহত্যার পরই এ অঞ্চলে যুদ্ধের দামামা বেজে গিয়েছিল।
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ডিসেম্বরের কয়েক মাস আগেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল শ্যাম মানেকশকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
বিজয়ের পেছনে ভূমিকা রাখা যুদ্ধের অন্যতম কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হলো:
লঙ্গেওয়ালার যুদ্ধ
ডিসেম্বরের ৪-৫ তারিখে লঙ্গেওয়ালা সীমান্তে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের 'আলফা কোম্পানি'র ১০০-১২০ জন এ যুদ্ধ শুরু করে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল কুলদীপ সিং চাঁদপুরী। ভারতীয় বিমান বাহিনীর সদস্যরা যোগদানের আগ পর্যন্ত এই অল্প কয়জন-ই পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে লড়ে গেছেন।
হিলির যুদ্ধ
হিলির যুদ্ধ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ ও আলোচিত ঘটনা। যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই হিলির যুদ্ধ শুরু হয়। হিলির যুদ্ধের পরিকল্পনা ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল থেকে পাকিস্তানি বাহিনীকে হটিয়ে বগুড়ার নিয়ন্ত্রণ নেয়া। ভারতীয় সেনাদের নেতৃত্বে ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামসের সিং। ভারতীয় বাহিনী হিলির যুদ্ধ জিতে গেলেও ৭০ জন দেনা নিহত হন।
অপারেশন ট্রাইডেন্ট
ডিসেম্বরের ৪-৫ তারিখ রাতে পাকিস্তানের বন্দর নগরী করাচিতে ভারতীয় নৌবাহিনী অভিযান চালায়। ভারতীয় বাহিনীর আক্রমণে পাকিস্তানের পিএনএস খাইবার, পিএনএস মুহাফিজ ও পিএনএস শাহ জাহান বন্দরে ডুবে যায়। তবে এ অভিযানে কোনো ক্ষয়ক্ষতিই হয়নি ভারতের। ৪ ডিসেম্বর দিনটি ভারতে নৌবাহিনী দিবস হিসেবে অয়ালন করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর
১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় বিশ্বজুড়ে স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল। সেসময় পাকিস্তানের পক্ষে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যাবার পর সপ্তম নৌবহরের কয়েকটি জাহাজ নিয়ে 'টাস্কফোর্স ৭৪' গঠন করে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিকল্পনার উলটো ফলাফল দেখা যায়, নৌবহর রওনা দেয়ার পরই দ্রুতগতিতে বাকি অঞ্চলগুলো মুক্ত করতে কাজ শুরু হয়।
১৪ ডিসেম্বর জাহাজগুলো মালাক্কা প্রণালি অতিক্রম করলেও ভারত ও রাশিয়ার কঠোর অবস্থানের জন্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান নেয়নি। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা এটি।
বাসান্তরের যুদ্ধ
বাসান্তরের যুদ্ধ সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট অরুণ খেতারয়ালের বীরত্বের জন্য প্রসিদ্ধ। তিনি একাই পাকিস্তানের কয়েকটি ট্যাংক ধ্বংস করেন। এরফলেই বাসান্তরের যুদ্ধে জয় পায় ভারতীয় বাহিনী। উপমহাদেশের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ট্যাংক যুদ্ধ এটি। অরুণ খেতাওয়াল এ যুদ্ধে তার বীরত্বের জন্য ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক পদক পরম বীর চক্র পান।