বিদেশফেরতদের জন্য কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করার কথা ভাবছে বাংলাদেশ
করোনাভাইরাসের নতুন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সম্ভাব্য প্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশও বিদেশফেরতদের কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করা, কোয়ারেন্টাইন ও জনসমাগম সীমিত করাসহ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এমনটি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবারের আন্ত:মন্ত্রণালয় সভায় আরো কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডক বলেন, "ওমিক্রনের বিষয়ে আজও কয়েক দফা মিটিং হয়েছে। এখন শুধু সাউথ আফ্রিকা নয়, অন্যান্য দেশেও এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে গেছে তাই বিদেশফেরত সব যাত্রীদের টেস্টের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর নেগেটিভ সার্টিফিকেট ও সম্পূর্ণ ভ্যাকসিনেটেড সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে এমন পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আমাদের এয়ারপোর্টে আরটি-পিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা আছে, প্রয়োজনে বিদেশ ফেরতদের আরটি-পিসিআর টেস্ট করা হবে। এছাড়া সবার কোয়ারেন্টাইনের বিষয়েও ভাবা হচ্ছে।"
এর আগে রোববার ওমিক্রনের সংক্রমণ মোকাবেলায় অধিকতর সতর্কতার অংশ হিসেবে ১৫ দফা নির্দেশনা জারি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এর মধ্যে রয়েছে বন্দরে স্ত্রিনিং জোরদার করা, সব ধরনের জনসমাগম নিরুৎসাহিত করা, পর্যটন কেন্দ্রে অর্ধেক মানুষের অংশগ্রহণ এবং রেস্টুরেন্টে অর্ধেক বা তারও কম মানুষ বসে খাওয়ার মতো নির্দেশনা।
ওমিক্রন মোকাবেলায় ভারতও বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছে।
রোববার দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতের মহারাষ্ট্রে আগত এক ব্যক্তির করোনা শনাক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে ভারত।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত নতুন এক বিধিমালায় বাংলাদেশসহ যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, বতসোয়ানা, চীন, মরিশাস, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং ইসরায়েলকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়।
তালিকায় থাকা দেশগুলো থেকে যাওয়া বা এসব দেশে ট্রানজিটে অবস্থান করা ভ্রমণকারীদের ভারতে পৌঁছে আরটি-পিসিআর টেস্ট করাতে হবে। পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসার পরই ভ্রমণকারীরা বিমানবন্দর ছাড়তে পারবেন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, ভাইরোলজিস্ট ডা. জাহিদুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "আমাদের ল্যাবের ডাটা দেখে মনে হচ্ছে এখনো ওমিক্রন আমাদের দেশে আসেনি। তবে বাংলাদেশ জনবহুল দেশ হওয়ায় এবং এখানে ওমিক্রন ছড়ালে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হবে সে বিবেচনায় বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রাখছে। ওমিক্রন দেশে প্রবেশ করলে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মত একসময় ছড়াবেই, তাই এর প্রবেশ যথাযম্ভব পেছাতে হবে যেন স্বাস্থ্যখাতের ওপর চাপ কম হয়।"
বিমানবন্দর পিসিআর মনিটরিং কমিটির সদস্য ডা. আরিফা আকরাম বলেন, "এখন শুধু যারা বিদেশ যাচ্ছে তাদের পিসিআর টেস্ট করা হচ্ছে। ওমিক্রন শনাক্তে বিদেশফেরত সব যাত্রীকে এয়ারপোর্টে টেস্ট করতে হবে। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকান অঞ্চল থেকে আগত যাত্রীদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে পাঠাতে হবে। অন্য দেশের যাত্রীদেরও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে।"
এদিকে ভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. এম মুশতাক হোসেন বয়স্ক এবং ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মানুষদের গণটিকা কার্যক্রমের আওতায় আনার উপর জোর দিয়েছেন।