বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে রংপুর অঞ্চলের ৫ নদীর পানি
ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুর অঞ্চলের প্রধান নদী তিস্তা, ধরলা, ব্রক্ষ্মপুত্র, সানিয়াজান ও দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তার পানি ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার, ধরলার পানি ব্রিজ পয়েন্টে ৭৩ সেন্টিমিটার ও ব্রক্ষ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৭৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি নতুন ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়ছে হাজার হাজার মানুষ। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে নদী ভাঙনও। ভাঙন কবলিত ও পানিবন্দী লোকজন তাদের বাড়ি ঘর ছেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাঁধ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির একদিকে উন্নতি অন্যদিকে অবনতি হচ্ছে। পানি কমছে জেলার প্রধান নদী সুরমার।
মঙ্গলবার বেলা ১২টায় সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পুরাতন সুরমায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পুরান সুরমায় দিরাই পয়েন্টে সুরমার পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দিরাই-শাল্লা উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নতুন কওে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি।
অন্যদিকে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডালিয়া পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইস গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
তিস্তা ব্যারাজের গেজ পাঠক নুরুল ইসলাম জানান, ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও অনবরত বৃষ্টির ফলে পানি বৃদ্ধি পেয়ে সোমবার দুপুরের দিকে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
তিস্তা ব্যারাজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পানি শাখা) এ এস এম আমিনুর রশিদ জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ব্যারাজের সব গেট খুলে রাখায় ভাটি এলাকার খালিশা চাঁপনী ও বাইশপুকুর চর প্লাবিত হয়ে বাড়িঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরে পানি বৃদ্ধির কারণে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা নদীর বাম তীর রক্ষায় নির্মিত টি-বাঁধটি ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাঁধটি রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ডাম্পিং করছেন। ফলে যেকোন মহুর্তে বাঁধটি নদী গর্ভে বিলিন হলে পাশ্ববর্তী গ্রামের শত-শত বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে।
উত্তরাঞ্চলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ জানান, ভারতে ভয়াবহ বন্যা হওয়ায় তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান, ব্রক্ষ্মপুত্র ও দুধকুমার নদীর ভাঙনে ১৫৩টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। তাদের ক্ষতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কোথাও উন্নতি, কোথাও অবনতি
সুনামগঞ্জ ও ছাতক শহরের নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে পানি কমছে। তবে হাওরের দিকের এলাকায় পানি বেড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে মানুষ। দোয়রাবাজার উপজেলায়ও পানি কিছুটা কমেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের হিসেবে ৬১টি ইউনিয়নে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত ১২৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে এক হাজার ১৯৪টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বন্যায় ৬৬ হাজার ৮৬৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বন্যার উন্নতির কারণে নতুন করে আর বন্যাশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়নি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান জানিয়েছেন সুরমা নদীর পানি কমছে, কমেছে বৃষ্টিপাতও। এতে সুনামগঞ্জ সদরসহ কিছু এলাকায় বন্যার উন্নতি হচ্ছে। তবে এই পানি নিম্নাঞ্চলে চাপ তৈরি করায় সেখানে নতুন করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে পুরান সুরমায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে দিরাইসহ বিভিন্ন এলাকা নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক আবুদল আহাদ বলেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে নিম্নাঞ্চলে নতুন করে কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নতুন করে আর কোন আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়নি এবং কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে আর আসেননি বলে জানান তিনি।
নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি
নেত্রকোনার কলমাকান্দায় পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বর্ষণের কারণে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। উব্দাখালি, সোমেশ^রী ও কংস নদী দিয়ে ঢলের পানি ক্রমশ ভাটির দিকে যাচ্ছে। তবে কলমাকান্দা সদর, রংছাতি, খারনৈ ও বড়খাপন ইউনিয়নে প্লাবিত শতাধিক গ্রামের মধ্যে অন্তত ৭০টি গ্রাম এখনও পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
পানিবন্দী হওয়া পরিবারগুলো অসহায় অবস্থায় দিন পার করছে। এদিকে কলমাকান্দা সদরের মন্তলা, চানপুর, পূর্ব বাজার, শিবমন্দির রোড, স্টেডিয়াম রোড, মুক্তিরনগর, নয়াপাড়া প্রভৃতি এলাকার বাসাবাড়ি থেকে বন্যার পানি সরে যাচ্ছে।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান জানিয়েছেন, কলমাকান্দা পয়েন্টে সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার আট সেন্টিমিটার এবং উব্দাখালি নদীর পানি ৬০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া জেলার অন্যান্য পয়েন্টেও কংস এবং সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে।