বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন না ৩ লাখ শিক্ষার্থী
উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩ লাখ শিক্ষার্থীই উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন না এমন আশঙ্কা রয়েছে।
দেশের পাবলিক, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১১ লাখ আসন খালি আছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পরীক্ষা দেওয়া ছাড়াই উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩.৭ লাখ শিক্ষার্থী। তাদের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও জুনিয়র স্কুয়ল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এ ফলাফল দেওয়া হয়েছে।
পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে দেশের উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো এখনই ১১ লাখ শিক্ষার্থীকে মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে প্রস্তুত্ত নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর টিচার-স্টুডেন্ট রেশিও (টিএসআর) এখনই অনেক বেশি, ১১ লাখ শিক্ষার্থীই ভর্তি হলে আরও বেড়ে যাবে এ অনুপাত।
বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ অনুপাত ১:১৯, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:২২ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:৩০।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. মানজুর আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে টিসিআর অন্তত ১:১৫ হওয়া উচিৎ।
এ অনুপাত বজায় না থাকলে গুণগত শিক্ষা প্রদান সম্ভব হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি। "কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান করলেও, বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা অনার্স ও মাস্টার্স পাস করার পর হতাশ হয়ে পড়েন।" বলেন তিনি।
আজ সকাল সাড়ে দশটায় উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়, গনভবন থেকে অনলাইনে সংযুক্ত থেকে ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশে উদ্যোক্তা তৈরি করতে কারিগরি শিক্ষা ও অন্যান্য ডিপ্লোমা প্রোগ্রামের ওপর জোর দিয়েছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
ইউজিসি'র সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে জানান, ১৪ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তির সামর্থ্য নেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর।
"শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বোচ্চ ৮ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি করার ক্ষমতা আছে। বাকিদের কারিগরি শিক্ষার জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিৎ।"
সব শিক্ষার্থীকে পাস নম্বর দেওয়া ছাড়া সরকারের আর কোনো উপায় ছিল না বলেও জানান তিনি। কিছু না করার চেয়ে এটি ভালো বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান জানান, অনেকেরই কাঙ্ক্ষিত নম্বর না থাকায় উত্তীর্ণ সকল শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হতে চাইলে জটিলতা সৃষ্টি হবে।
তাদের কারিগরি শিক্ষা, ডিপ্লোমা ও উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য অন্যান্য পেশাদার প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেন তিনি। "প্রথাগত উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানের ভর্তি হওয়া ছাড়াও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা সরকারের দায়িত্ব। শীঘ্রই সরকারের এব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। অন্যথায় এসব শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।" বলেন তিনি।
অনেক শিক্ষার্থীরই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার খরচ বহনের সামর্থ্য নেই। ইউজিসি'র পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, প্রাইভেট বিশবিদ্যালয়গুলোতে ১.৮০ লাখ আসন রয়েছে। কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে প্রতিবছর এক লাখ- ১.২ লাখ টাকা খরচ হবে। ফলে ৬৬ হাজারেরও বেশি আসন খালি থাকে।
গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দেশজুড়ে ৯ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে পরীক্ষা না নিয়েই জেএসসি ও এসএসসি ফলাফলের ভিত্তিতে ফলাফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে, বিদ্যমান আইনে পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া ফলাফল প্রকাশের নিয়ম না থাকায় জাতীয় সংসদে সংশোধিত তিনটি বিল পাস করার পর ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
ফলাফল কীভাবে জানবেন?
উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না পাঠিয়ে অনলানেই প্রকাশিত হয়েছে।
মোবাইল থেকে মেসেজ পাঠিয়েও ফলাফল জানা যাবে। ফলাফল জানতে মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করুন: "HSC<>Board name (First 3 letters)<>Roll<>2020" । মেসেজটি পাঠিয়ে দিন ১৬২২২ নাম্বারে।
এই ওয়েবসাইটেও ফলাফল জানতে পারবেন: www.educationboardresults.gov.bd.