মানিকগঞ্জে বাড়ছে ঢাকামুখী মানুষের ভিড়
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানীতে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের প্রায় ৩৫ কিলোমিটার অংশ রয়েছে মানিকগঞ্জ জেলায়।
সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে গণপরিবহনসহ সকল ধরণের যান চলাচল বন্ধ থাকলেও মহাসড়ক এলাকায় চলাচল করছে কিছু প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল চালকেরা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যাত্রী নিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে এসব চালকেরা।
তবে লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে রয়েছে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসন। মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি। অব্যাহত রয়েছে ম্যাজিস্ট্রেটদের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এতকিছুর পরও নানা অজুহাতে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় বাড়ছে মানিকগঞ্জে।
ফেরিতে করে যাত্রী পারাপার বন্ধ থাকার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে প্রতিটি ফেরিতেই কিছু কিছু করে যাত্রী পার করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশন আরিচা অঞ্চলের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা।
যার ফলে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌরুট দিয়ে ঢাকামুখী যাত্রীরা অনায়াসে পদ্মা-যমুনা পারাপার হয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কয়েকগুণ অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে এসব যাত্রীদের।
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে আলাপ হলে গাবতলীমুখী যাত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন. মিরপুরে ছোট একটি চায়ের দোকান রয়েছে তার। আশেপাশের দোকানীরা গলির মধ্যে ছোট দোকানগুলো খুলতে শুরু করেছে বলে মুঠোফোনে জানতে পেরেছেন তিনি। এর জন্য পাবনা থেকে গাবতলীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন আনোয়ার।
আয়েশা নামের মধ্যবয়সী এক নারী বলেন, সাভারের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন তার ছেলে ও ছেলের বউ। ঈদের পরদিন থেকে তারা দু'জনেই ঠান্ড-জ্বরে আক্রান্ত। বিছানা থেকে উঠার সাধ্য নেই কারোরই। সেই জন্য ছেলে এবং ছেলের বউকে আনতে সাভার যাচ্ছেন তিনি।
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার এমদাদ হোসেন বলেন, লকডাউনের মধ্যে ভাড়ায় মোটরসাইকেলের বেশ চাহিদা রয়েছে। এছাড়া মহাসড়কের আশেপাশের আঞ্চলিক সড়ক হয়ে খুব সহজেই ঢাকা যাওয়ার রাস্তাও রপ্ত করেছেন তিনি। তবে করোনা সংক্রমণের বিষয়ে জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
ঢাকার হেমায়েতপুর এলাকার প্রাইভেটকার চালক পান্নু মিয়া বলেন, লকডাউনের মধ্যে অনেকেই প্রাইভেট কার চালাচ্ছে। যে কারণে তিনিও বের হয়েছেন। পুলিশ মহাসড়কে যাত্রীসহ পেলেই মামলা দিয়ে দেয়। তবে ভাড়া বেশি পাওয়ার কারণে মামলা ভাঙ্গাতে কোন সমস্যা হয় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গোলড়া হাইওয়ে থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বেশ কয়েকটি জায়গায় জেলা ও হাইওয়ে পুলিশের চেক পোস্ট রয়েছে। চেক পোস্টের আগে যাত্রীদেরকে নামিয়ে দেয় ওই চালকেরা। এরপর যাত্রীরা কিছুদূর হেঁটে আবার সেই ভাড়া মোটরসাইকেল করে গন্তব্যে রওয়ানা হন।
আবার প্রাইভেট কার বা এ্যাম্বুলেন্সে অসুস্থ রোগী থাকলে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। সবমিলিয়ে নানা অজুহাতে অল্প কিছু মানুষ লকডাউনেও বের হচ্ছে। তবে এসব মানুষদেরকে ঘরে ফেরাতে হাইওয়ে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম জিল্লুর রহমান বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে জরুরী পণ্যবাহী ও মরদেহবাহী গাড়ি পারাপারের জন্য ২/১টি করে ফেরি চলাচল করছে।
এসব ফেরিতে করে অল্প কিছু যাত্রীরা নৌরুট পারাপার হচ্ছে। মানবিক কারণে এসব যাত্রীদেরকে নৌরুট পারাপারের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে জেলার প্রতিটি উপজেলার ইউএনও এবং এসি ল্যান্ড ছাড়াও জেলা প্রশাসনের একাদিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম মাঠে কাজ করছে।
প্রতিদিনই প্রায় লাখ টাকা করে জরিমানা করা হচ্ছে। এরপরও ঝুঁকি নিয়ে কিছু মানুষ যাতায়াত করছে। তবে লকডাউন বাস্তবায়নে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানান তিনি।