মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ায় তৃতীয় কিশোয়ার
কিশোয়ার চৌধুরী, প্রতিযোগিতায় প্রথম না হলেও জিতে নিয়েছেন লাখ লাখ মানুষের হৃদয়, সফলভাবে বৈশ্বিক মঞ্চে বাংলাদেশি খাবার ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছেন।
মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার ১৩ তম আসরে বিজয়ী হয়েছেন জাস্টিন, প্রথম রানার আপ পিট। অল্প কিছু নম্বরের ব্যবধানে ১১৪ পেয়ে দ্বিতীয় রানার আপ হয়েছেন কিশোয়ার। পিট পেয়েছেন ১২৪।
এরই সাথে প্রথম কোনো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিসেবে মাস্টারশেফের শীর্ষে ৩-এ জায়গা করে নিয়ে ইতিহাস গড়েছেন ৩৮ বছর বয়সী কিশোয়ার চৌধুরী। তার তৈরি অসাধারণ সব ডিশ নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ ভারত-বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো।
"এ সব বাঙালি খবারগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চলে এসেছে। আমিও এরমধ্যে নিজের সৃজনশীলতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি," হাফিংটন পোস্টের কাছে এভাবেই তার অনুভূতির কথা বলছিলেন।
গ্র্যান্ড ফাইনাল এপিসোড
সোমবার ও মপঙ্গলবার দুদিন ধরে দুই ভাগে অনুষ্ঠিত গ্র্যান্ড ফাইনালে শীর্ষ স্থানের জন্য লড়েছেন কিশোয়ার, জাস্টিন ও পিট।
মাস্টারশেফের সর্বশেষ চূড়ান্ত রাউন্ডে প্রতিযোগীদের একটি প্রেশার টেস্টের মুখোমুখি হতে হয়। সেলিব্রেটি শেফ পিটার গিলমোরের দেওয়া টাস্ক ছিল এটি।
একইসঙ্গে তাদের একটি নয়, দুটি ডিশ বানাতে হয়। একটি স্যাভরি আইটেম, আরেকটি ডেসার্ট আইটেম।
মিস্টেরি বক্স চ্যালেঞ্জে প্রতিযোগীদের নিজস্ব পরিচিত কিছু আইটেম দিয়েই ডিশ বানাতে বলা হয়।
কিশোয়ারের জনপ্রিয় ডিশগুলো
মাস্টারশেফে কিশোয়ারের যাত্রা শুরুর প্রথম ডিশ ছিল কাঁচা আমের ঝোল দিয়ে রান্না করা সার্ডিন, সাথে কালো মসুর ডাল, বিটরুট ও ব্লাড অরেঞ্জ ভর্তা।
কালাভুনা, ফুচকা-চটপটি, মাছের ঝোল, রাঙামাটি বারামুন্ডি কারিসহ আরও অনেক ঐতিহ্যবাহী ডিশ নিয়ে কিশোয়ার হাজির হয়েছেন মাস্টারশেফের বিভিন্ন পর্বে।
খো সুয়ের সঙ্গে ভ্যানিলা মিশিয়ে নতুন পদের খাবার রান্না করেছেন কিশোয়ার। বানিয়েছেন পার্সিয়ান অ্যান্ড ভ্যানিলা রোজেস নামে পিস্টাচিও কুলফি। ভিন্ন স্বাদের দেশি খাবার রান্নার সঙ্গে সঙ্গে নানা পদের আন্তর্জাতিক কুইজিন রান্নাতেও কিশোয়ার দক্ষতা দেখিয়েছেন।
খাবারে বৈচিত্র্য আনতেও পারদর্শী তিনি। বিভিন্ন পর্বে নানা পদের ফিউশন দেখা গেছে তার রান্নায়। ঐতিহ্যবাহী 'ভাপা মাছে'র পদে ঝোলের কারসাজির মাধ্যমে আলাদা নতুন স্বাদের রান্না করেছেন তিনি।
সেমি ফাইনাল ডিশে তো তিনি তার 'লাভ লেটার টু বাংলাদেশে'র মাধ্যমে অনুষ্ঠানের বিচারকদের মন জয়ের পাশাপাশি হাজারো বাংলাদেশির প্রশংসা কুড়িয়েছেন। পানের সঙ্গে আইসক্রিম দিয়ে 'আ ডিনার মিন্ট' নামের পরিচিত অথচ একেবারেই আলাদা ধরনের ডেজার্ট তৈরি করেন তিনি।
কিশোয়ারের পরিচয়
কিশোয়ারের জন্ম অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যে। মা লায়লা ও বাবা কামরুল চৌধুরীর ঘরে মেলবোর্নে জন্ম তার। বেড়ে ওঠাও অস্ট্রেলিয়াতেই। তার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা, ৫০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান তিনি। সেখানে গিয়ে ভারতীয় লায়লা চৌধুরীর সঙ্গে তার সম্পর্ক। ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মেলবোর্নে বাঙালি কম্যিউনিটি গড়ে তুলতে কিশোয়ারের মা-বাবা দুজনই অনন্য ভূমিকা রাখেন।
পেশায় তিনি একজন বিজনেস ডেভেলপার। রান্না ছাড়াও ইতিহাস, নৃবিজ্ঞানে আগ্রহ আছে তার, ভালোবাসেন ঘুরে বেড়াতে। কবিতাও লেখেন তিনি।
মোনাশ ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর অব কমার্স ডিগ্রি অর্জন করেন কিশোয়ার, পরবর্তী সময়ে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অব আর্টস থেকে গ্রাফিক ডিজাইনে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি নেন।
২০১৫ সালে তিনি মেলবোর্নে ফিরে যান, তবে মহামারির আগ পর্যন্ত প্রতি বছর চার-পাঁচবার ঢাকায় যাতায়াত ছিল তার। বিশ্বের তিনটি মহাদেশের রান্না সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা থাকা রান্নায় মশলার ব্যবহার, অপূর্ব ফিউশন তৈরিতে অসামান্য দক্ষতা অর্জন করেছেন তিনি।
দুই সন্তানের মা কিশোয়ারের ইচ্ছা বাংলাদেশি রান্না নিয়ে একটি বই লিখে যাওয়া, এবং কোনো পেশাদার রান্নাঘরে কাজ করা।