মৃতপ্রায় আবরারকে চিকিৎসা দেবার চেষ্টা করেছিলেন খুনীরা
রোববার রাতে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলে ব্যাচমেটদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার আবরার ফাহাদকে মৃত্যুর আগে চিকিৎসা দেবার চেষ্টা করেছিলেন নির্যাতনকারীরা।
হলের বাসিন্দা এক প্রত্যক্ষদর্শী এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বুয়েটের ১৬তম ব্যাচের এ ছাত্র দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, হলে ঢুকে পুলিশ প্রথমে কোনো কিছুই করেনি। বরং তাদের ওপর ‘পুজার দায়িত্ব’ রয়েছে বলে হল ছেড়ে চলে যায় ওরা।
প্রত্যক্ষদর্শী এই শিক্ষার্থীও হত্যার দায়ে সন্দেহভাজনদের তালিকায় রয়েছেন। তবে তিনি এই খুনের সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন।
তিনি জানান, “আবরারকে আটটার দিকে তার বন্ধুরা ডেকে নেবার সময় আমি আমার কক্ষেই ছিলাম। ওই সময়কার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। ভিডিওটা আমি দেখেছি। ওরা সবাই ১৭তম ব্যাচের ছাত্র।”
পরের ঘটনাবলীর কথা এই প্রত্যক্ষদর্শী এভাবে জানান: “সাড়ে বারোটা পর্যন্ত আমি কক্ষেই ছিলাম। ওখানে কী হচ্ছে সে বিষযে কোনো ধারণাই ছিল না আমার। ২০১১ নম্বর কক্ষে পরে গিয়েছি আমি। গিয়ে দেখলাম, বিছানায় শুয়ে রয়েছে আবরার। তার দু’তিন জন ব্যাচমেট তার শরীরে মেসেজ করছে। তখনও সে জীবিত ছিল।”
“এরপর আবরারকে ওরা ২০০৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। আমিও সেখানে গেলাম। আবরারের ব্যাচমেটরা ওকে চিকিৎসা দেবার চেষ্টা করছিল। একই সময়ে ওরা চকবাজার পুলিশকে ডাকল আবরারকে তাদের হাতে তুলে দেবার জন্য। ওরা পুলিশকে বলছিল, একজন শিবির কর্মী হলে ধরা পড়েছে।”
প্রত্যক্ষদর্শী জানালেন, রাত একটার দিকে পুলিশ হলে এলে ১৭তম ব্যাচের চার জন ছাত্র আবরারকে দোতলা থেকে নিচতলায় নিয়ে যান।
কিন্তু পুলিশ সদস্যরা আবরারকে হস্তান্তরে দেরি দেখে তাদের ‘পুজা ডিউটি’র কথা বলে হল ছেড়ে চলে যান।
রাত আড়াইটার দিকে নিচতলায় অনেক ছাত্রের জমায়েত হয়। ততক্ষণে আবরার মারা গেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণা। কারণ, “সে সময়ে ওর শরীরে কোনো নড়াচড়া ছিল না।”
এর কিছু সময় পর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক হলে এসে আবরারকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রসঙ্গত, বুয়েটের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ট্রিপল ই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে রোববার রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে ছাত্র শিবিরের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার সন্দেহে আবরারকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে মারধর করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। এ ঘটনায় সিটিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা নিয়ে পুলিশ ছাত্রলীগের নয় নেতাকর্মীসহ ১৯ জনকে আটক করেছে।