মেজর সিনহা হত্যা: ওসি প্রদীপসহ কারাগারে থাকা সব আসামী আদালতে
মেরিন ড্রাইভ সড়কের চেকপোস্টে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় কারান্তরীণ টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ অভিযুক্ত ১৫ আসামীকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। মামলার চার্জগঠনে (বিচার কাজ শুরুর প্রক্রিয়া) ধার্য্যদিন হিসেবে তাদের আদালতে হাজির করা হয়েছে। সে বিষয়ে শুনানির পাশাপাশি জামিন আবেদন করা আসামী ওসি প্রদীপসহ অন্য দু'জনের বিষয়েও শুনানির কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম।
এর আগে ১৩ জুন দুপুরে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালতে ওসি প্রদীপ ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতের জামিন আবেদন শুনানির কথা থাকলেও তা ২৭ জুন করা হবে বলে দিন ধার্য্য করা হয়েছিল। ২৪ জুন আত্মসমর্পণ করা ওসি প্রদীপের সহযোগী কনস্টেবল সাগর দেবের করা জামিন আবেদনও আজ (২৭ জুন) শুনানির তারিখ দেয়া হয়।
রবিবার (২৭ জুন) বেলা সাড়ে ১০টায় প্রিজন ভ্যানে করে জেলা কারাগার থেকে তাদের কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আনা হয়। কঠোর নিরাপত্তায় কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে ১৫ আসামিকে।
মামলায় অভিযুক্ত বরখাস্ত হওয়া টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, কনস্টেবল সাগর দেব ও বাহারছরা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত'র পক্ষে করা জামিন আবেদনের শুনানিও হবে।
পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, সাবেক ওসি প্রদীপ ও এসআই নন্দদুলালের জামিন চেয়ে গত ১০ জুন আদালতে আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু ওই দিন আদালতে নথি উপস্থাপন না হওয়ায় শুনানির দিন ধার্য করা হয়নি। ১৩ জুন এ নিয়ে পুনরায় আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে শুনানির জন্য ২৭ জুন দিন ঠিক করেন। এ মামলায় অভিযুক্ত কনস্টেবল সাগর দেব গত ২৪ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত তার জামিন আবেদনের বিষয়ে শুনানির জন্য আজ দিন ধার্য করেছিলেন।
সিনহা হত্যা মামলায় (এস,টি-৪৯৩/২১) চার্জগঠন শুনানিতে আসামী পক্ষে আইনী লড়াই করছেন কক্সবাজার বারের এড. দিলীপ দাশ, মহিউদ্দিন খান, মোবারক হোসেন আর চট্টগ্রাম হতে এসেছেন এড. রানা দাশগুপ্ত, এড. চন্দন দাশসহ ১০-১২ জনের একটি আইনজীবী প্যানেল।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম ও বাদীর পক্ষে এড. মোহাম্মদ মোস্তফা, সাবেক পিপি এড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর শুনানিতে অংশ নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশিকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়েছে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ (পরিদর্শক) লিয়াকত আলীকে প্রধান করে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটির তদন্ত করার আদেশ দেন র্যাবকে। এরপর গত ৬ আগস্ট প্রধান আসামি লিয়াকত আলী ও প্রদীপ কুমার দাশসহ ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
পরবর্তীতে সিনহা হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে পুলিশের করা মামলার ৩ জন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টের দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ ছাড়া একই অভিযোগে পরে গ্রেফতার করা হয় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক সদস্য কনস্টেবল রুবেল শর্মাকেও।
মামলায় গ্রেফতার ১৪ আসামিকে র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাদের মধ্যে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া ১২ জন আসামি আদালতে ঘটনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
উক্ত মামলায় গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম। মামলায় অভিযুক্ত ওসি প্রদীপের অন্যতম সহযোগী কনস্টেবল সাগর দেব দীর্ঘ ১১ মাস পলাতক থাকার পর ২৪ জুন আত্মসমর্পণ করেন তিনি। এরপর নির্ধারিত দিন হিসেবে চার্জগঠন শুনানিতে সকল আসামীকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।