রাজধানীর বাইরে ৫ হাসপাতালে হচ্ছে ৫০০ বেডের বার্ন ইউনিট
আগুনে দগ্ধ হওয়া রোগীদের চিকিৎসায় ঢাকার বাইরে পাঁচটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিট করার পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ সরকার।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ বেডের পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট স্থাপন করা হবে। অর্থাৎ, মোট ৫০০ বেডের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
১০০ বেডের মধ্যে ১০টি আইসিইউ, আটটি এইচডিইউ, ১০টি কেবিন এবং নারী ও পুরুষের জন্য ৩৬টি করে বেড তৈরি হবে। এছাড়া এই বার্ন ইউনিটে দুটি রেগুলার অপারেশন থিয়েটার এবং একটি ইমার্জেন্সি অপারেশন থিয়েটার থাকবে। বাংলাদেশ এবং সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের (এসএফডি) যৌথ উদ্যোগে এই হাসপাতালগুলোতে বার্ন ইউনিট নির্মাণ ও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির সমন্বয়ক ড. সামন্ত লাল সেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, "আগামী ৮ ডিসেম্বর এই প্রকল্পটি আলোচনার জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এর আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৩ কোটি টাকা।"
এদিকে, ২৫ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এক চিঠিতে প্রকল্পটির দ্রুত অনুমোদন ও কাজ দ্রুত শুরু করতে একনেককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ২০১৭ সালের ৭ অক্টোবর সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এর অর্থায়নে বাস্তবায়িতব্য প্রকল্পটির জন্য বাংলাদেশ সরকার ও এসএফডি এর মধ্যে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ ১১২.৫০ মিলিয়ন সৌদি রিয়েলের একটি ঋণচুক্তি সাক্ষরিত হয়। উক্ত ঋণচুক্তিটির গ্রেস পিরিয়ড ৫ বছর।
এতে আরও বলা হয়, ঋণচুক্তিটি স্বাক্ষরের পর প্রায় চার বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও প্রকল্পটির ডিপিপি এখনো অনুমোদন না হওয়ায় গ্রেস পিরিয়ডের সুবিধা কমে যাচ্ছে। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।
প্রকল্পের ঋণ চুক্তির মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে শেষ হবে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটির ডিপিপি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে একনেক উইংয়ে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, আগামী ৭ ডিসেম্বর একনেক সভায় উপস্থাপনের জন্য প্রাথমিক যে তালিকা করা হয়েছে, সেখানে প্রকল্পটি রয়েছে।
বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ওদিকে সার্জারি ওয়ার্ডের ১৪টি বেডে আপাতত অগ্নিদগ্ধ রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (আরএমসিএইচ) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানি টিবিএসকে বলেন, "ডাক্তার-নার্স থাকলেও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের সেবা দিতে পারি না আমরা। অধিকাংশ রোগীকে এখান থেকে বার্ন ইনস্টিটিউটে রেফার করতে হয়। আমাদের হাসপাতালে নতুন করে দুই তলা করা হচ্ছে যার পুরোটা হবে বার্ন ইউনিট। ১০০ বেডের বার্ন ইউনিট হলে রাজশাহী অঞ্চলে দগ্ধ রোগীদের ভোগান্তি কমবে।"
অন্যদিকে, বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে চলতো ৫০ শয্যার বার্ন ইউনিট। গত বছরের ২৮ এপ্রিল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগীয় প্রধান ডা. এম এ আজাদ সজলের মৃত্যর পরে বন্ধ হয়ে যায় এ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট। এখন সেখানে আগুনে দগ্ধ রোগী গেলে ঢাকায় রেফার করতে হয়।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে মাত্র ১২ বেডের বার্ন ইউনিট রয়েছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬ বেডের বার্ন ইউনিট রয়েছে। তারমধ্যে ৪টি বেড নষ্ট। ওদিকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোন বার্ন ইউনিট নেই।
ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোর বার্ন ইউনিটে বেড, আইসিইউ, চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি সংকটের কারণে যথাযথ সেবা পায়না রোগীরা। ফলে দেশের যে কোনও জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সারা দেশের রোগীদের চিকিৎসা নিতে ঢাকায় আসতে হয়। `গোল্ডেন আওয়ারের'মধ্যে চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হওয়ায় রোগীদের সিভিয়ারিটি ও মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ে।
ড. সামন্ত লাল সেন বলেন, "সারাদেশ থেকে আগুনে দগ্ধ রোগী আমাদের হাসপাতালে আসেন চিকিৎসার জন্য। আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরের ২৪ ঘন্টা এ রোগীদের চিকিৎসায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এ সময়কে গোল্ডেন আওয়ার বলে থাকি। কিন্তু দুঃখের বিষয় চিকিৎসার এ গুরুত্বপূর্ণ সময়ের অনেকটা পথেই নষ্ট হয়।"
"বিভাগীয় কিংবা জেলা শহরগুলোতে এই রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলে প্রাণহানি ঠেকানো যেত। তাই ঢাকার বাইরে পাঁচটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ বেড করে ৫০০ বেডের বার্ন ইউনিট করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে," বলেন তিনি।