রাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে সমাহিত হবেন হাসান আজিজুল হক
কথাসাহিত্যের বরপুত্র হাসান আজিজুল হক তার গোটা জীবন কাটিয়েছেন রাজশাহীতে।জীবনের সমাপ্তিও টানলেন সেখানেই।
আজ মঙ্গলবার বাদ জোহর জানাজা শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন এই মহাত্মা।
সকাল ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাবির দর্শন বিভাগে, সেখানে বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন।
পরে দুপুর ১২টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে তার মরদেহ রাখা হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ বকুল জানান, শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবরস্থানে হাসান আজিজুল হককে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। পরে রাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে তাকে সমাহিত করা হবে।
সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাত সোয়া ৯টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা-বিহাসে তার নিজ বাড়ি 'উজানে' শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। এই দুঃসংবাদে ছুটে যান তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ছুটে যান সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ।
৮২ বছর বয়সী হাসান আজিজুল হক বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছাড়াও হার্ট ও ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছিলেন। গত আগস্ট মাসে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়া হয়। কিছুটা সুস্থ হলে, ফিরে যান রাজশাহীতে।
হাসান আজিজুল হকের জন্ম ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে। তারপর বেড়ে ওঠা, শিক্ষা, রাজনীতি, সাহিত্যচর্চা- সবই রাজশাহীতে। ১৯৭৩ সাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন।
'জীবন ঘষে আগুন' জ্বেলে গেছেন তিনি শিক্ষার জন্য। 'আজীবন' 'ঘরগেরস্থি' করে গেছেন সাহিত্যের সঙ্গে। 'আত্মজা ও একটি করবী গাছ', 'আগুন পাখি'সহ তার সৃষ্টিগুলো বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা। হাসান আজিজুল হক বেঁচে রইবেন সাহিত্য অনুরাগী অসংখ্য আত্মজ ও আত্মজার স্মরণে এবং শ্রদ্ধায়।
হাসান আজিজুল হকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
সোমবার রাতে এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, হাসান আজিজুল হকের মৃত্যু দেশের সাহিত্য অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। দেশের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক উন্নয়নে হাসান আজিজুল হকের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
রাষ্ট্রপতি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এদিকে, এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাসান আজিজুল হক তার সাহিত্যকর্ম ও সৃজনশীলতার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।