রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগে নেদারল্যান্ডসের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে নেদারল্যান্ডস সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার (২ ডিসেম্বর) স্পেনের মাদ্রিদে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠককালে তিনি এ আহ্বান জানান।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. এ কে আবদুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে সাংবাদিকদের জানান, আগামী সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের শুনানিতে যোগ দিতে মিয়ানমারের স্ট্যাট কাউন্সিলর অং সান সুচি আপনাদের দেশ সফর করবেন। সে সময় নেদাল্যান্ডসের উচিত হবে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের সৃষ্টি এবং এর সমাধানও তাদেরই করতে হবে। তিনি মার্ক রুটেকে বলেন, মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী এবং বন্ধুপ্রতীম দেশ। তারা সবসময়ই বলে আসছে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেবে। তারা কখনোই বলেনি যে, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফেরত নেবে না। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের আন্তরিকতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আপনারা সহায়তা করতে পারেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রুটেকে জানান, ১১ লাখ রোহিঙ্গা আগমনের কারণে কক্সবাজারের পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সরকার ভাসানচর নামে একটি দ্বীপে সাময়িকভাবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানে দ্বীপটির উন্নয়ন করেছে।
শেখ হাসিনা রাজনৈতিক সমর্থন প্রদানের মাধ্যমে সোচ্চার হওয়া এবং রোহিঙ্গাদের জরুরি সহায়তা দানের জন্য নেদারল্যান্ডসকে ধন্যবাদ জানান।
জলবায়ু ইস্যু নিয়ে আলাপকালে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ আরও কমাতে হবে। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ কার্বন নিঃসরণকারী নয়। কিন্তু অন্যদের নিঃসরণের কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবেলায় তার সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, নিয়মিত গাছ রোপণের পাশাপাশি মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমরা ১০ মিলিয়ন বৃক্ষ রোপণের পরিকল্পনা নিয়েছি। ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০ গ্রহণে নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী পানি খাতে দেশটির আরও বিশেষজ্ঞ সহায়তা কামনা করেন।
আগামী বছর ক্লাইমেট ভারনারেবল ফোরামের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণে সম্মত হওয়ায় মার্ক রুটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আগামী বছর আমরা কার্বন নিঃসরণ কমাতে যাচ্ছি। তাই বছরটি আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বহু আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় জনগণকে সচেতন করায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে হতাহতের পরিমাণ অনেক কমে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক সৃষ্টি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে জনগণকে রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করেছে। তিনি বলেন, আমরা বাঁধগুলো উঁচু করতে চাই এবং এ ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা দরকার।
শেখ হাসিনা আগামী বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান। পরে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তারা রোহিঙ্গা ও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে মিয়ানমারের নাগরিকত্বের আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে চায় না।
শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুতে চীন, ভারত, জাপান এবং থাইল্যান্ড বাংলাদেশের সঙ্গে একমত এবং এ ব্যাপারে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তারাও বলছে, রোহিঙ্গাদের উচিত তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়া।
তিনি বলেন, আমি মনে করি মিয়ানমারের উচিত আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করা। কারণ আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আঞ্চলিক শান্তি চাই।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান মিয়ানমার সফর করবেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সকল পর্যায়ে বাংলাদেশ সহযোগিতা ও যোগাযোগ করে যাচ্ছে।
সন্ত্রাসবাদ ইস্যু প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এর বিরুদ্ধে তার সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। অন্য দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কাউকে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।