লক্ষ্মীপুরের আজিজ বিড়ি থেকে সজীব গ্রুপ
লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ বাজারে তাঁত, পাট ও আজিজ বিড়ির ব্যবসা দিয়ে যাত্রা শুরু সজীব গ্রুপের। গ্রুপটির বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল হাসেমের পিতা নোয়াখালী বেগমগঞ্জের বালুচরা গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম মিয়া। ১৯৬২ সালে নোয়খালীর চৌমুহনী এলাকার ডেল্টা জুট মিলের সাড়ে তিন লাখ টাকার শেয়ার কিনেন তিনি।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামে এসে নন বাঙালি দাদা ভাইয়ের অ্যালুমুনিয়াম কারখানার সম্পত্তি নিলামে কিনে নেয়। এই সম্পত্তির মধ্যে ছিল চট্টগ্রাম টেরিবাজার এলাকায় অ্যালমুনিয়াম শোরুম, নাসিরাবাদ এলাকায় অ্যালমুনিয়াম কারখানা ও মাঝির ঘাট এলাকায় অ্যালমুনিয়াম গোডাউন। এরপর চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন অ্যালমুনিয়ামের ব্যবসা করেন ইব্রাহিম মিয়া। তিনি এক সময় সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন।
নব্বইয়ের দশকে ইব্রাহিম মিয়ার পাশাপাশি তার চার ছেলেও ব্যবসা আসেন। এরমধ্যে বড় ছেলে আবুল হাসেম পাকিস্তান থেকে সেজান জুস, নসিলা, কুলসন সেমাই, কুলসন মেকারনিসহ বিভিন্ন প্রোডাক্ট আমদানি করতেন।
দ্বিতীয় ছেলে মাহবুব বাবা ইব্রাহিম মিয়ার সাথে থেকে ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। তৃতীয় ছেলে ওমর ফারুক নোয়াখালীতে তার বাবার বিড়ির কারখানা দেখাশোনার পাশাপাশি লাইফবয় সাবানের এজেন্ট ও গাড়ির ব্যবসা করতেন। অন্যদিকে, চতুর্থ ছেলে আজাদ দীর্ঘদিন বড় ভাই আবুল হাসেমের সাথে ব্যবসা করলেও বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করছেন।
ব্যবসার পাশাপাশি পেট্রো কেমিক্যাল থেকে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকায় বিশাল জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করেন ইব্রাহিম মিয়া। ওই বাড়িতে থেকেই তার ছেলেরা নিজ নিজ ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ইব্রাহিম মিয়া চট্টগ্রামে যেমন অ্যালমুনিয়াম কোম্পানির সম্পত্তি কিনে অ্যালমুনিয়াম ব্যবসা শুরু করেন, একইভাবে ঢাকেশ্বরী কটন মিল কেনার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জে ও ব্যবসা করতে থাকেন। ঢাকেশ্বরী কটন মিল কিনে ওখানে গড়ে তোলেন ইব্রাহিম কটন মিল ও ইব্রাহিম রাবার মিল।
ইব্রাহিম মিয়ার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি দুই সংসারের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। দ্বিতীয় সংসারের ছেলে-মেয়েরা ঢাকার গুলশানে বসবাস করছেন।
এরমধ্যে নারায়গঞ্জের কটন মিল ও রাবার মিল পান আবুল হাসেম। নব্বইয়ের দশকে তিনি চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জে তার ব্যবসা স্থানান্তর করে ছেলের নামে সজীব গ্রুপ গড়ে তোলেন। ওই এলাকায় তৈরি পোশাক খাতের বিভিন্ন কারখানা স্থাপন করেন।
এছাড়া এক সময় পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য আমদানি করত, পরবর্তী সময়ে সেসব পণ্য উৎপাদন শুরু করে সজীব গ্রুপ। বর্তমানে আবুল হাসেমের পাশাপাশি সজীব গ্রুপের ব্যবসার হাল ধরেছেন তার চার ছেলে ও এক মেয়ে। পোশাক খাতের ব্যবসার পাশাপাশি বর্তমানে সজীব গ্রুপের রাইস মিল ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, অ্যাগ্রো, ময়দার মিল, আবাসন, ইন্সুরেন্স খাতে ব্যবসা রয়েছে।
চার ছেলেসহ আবুল হাসেম বর্তমানে ঢাকার বারিধারায় বসবাস করেন। তার চার ছেলে হলেন হাসিব বিন হাসেম, তারেক ইব্রাহিম, তাওসিব ইব্রাহিম ও তানজিম ইব্রাহিম।
সজীব গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সজীব করপোরেশন, হাসেম ফুডস লিমিটেড, হাসেম অটো রাইস মিল, সজীব ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, হাসেম অগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, হাসেম ফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেড, সজীব হোমস লিমিটেড, মার্স ইন্টারন্যাশনাল, সজীব লজিস্টিকস ও সেভি ফুডস। এখনো চট্টগ্রামের টেরিবাজারে গ্রুপটির একটি লেয়াজো অফিস রয়েছে।
আবুল হাসেম এলাকায় 'আবুল হাসেম কোম্পানি' নামে পরিচিত। তার গ্রামের বাড়ি বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়াপুর ইউনিয়নের বালুচরা গ্রামে।
লক্ষ্মীপুর সদরের চন্দ্রগঞ্জ পশ্চিম বাজারের ব্রিজের পাশে 'হাসেম কোম্পানির গদিঘর' নামে একটি জায়গা আছে। তার পাশে তাদের পুরাতন বাড়ি। ১৯৯০ সালের দিকে বিড়ি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তারা গ্রাম থেকে চলে যান।
গ্রামের লোকজন জানান, কয়েক বছর পর পর এলাকায় আসতেন। তবে দীর্ঘদিন এলাকায় যান না তারা। যেই কারণে নতুন প্রজন্মের কাছে তারা অনেকটা অপরিচিত।