শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ সাফল্য অর্জন: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে যে দেশগুলোতে, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
শিশু ও মাতৃমৃত্যু বিষয়ে ইউনিসেফ ও ডব্লিউএইচওর নেতৃত্বে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো নতুন ডাটা তৈরি করেছে। সে অনুযায়ী, আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি নারী ও শিশুর মৃত্যু এড়ানো যাচ্ছে।
তবে এ সফলতার পরও বিশ্বের কোথাও না কোথাও প্রতি ১১ সেকেন্ডে একজন গর্ভবতী নারী বা নবজাতকের মৃত্যু হচ্ছে।
শুক্রবার নিউইয়র্ক থেকে প্রদত্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০০০ সালের পর থেকে শিশুমৃত্যু প্রায় অর্ধেক এবং মাতৃমৃত্যু এক-তৃতীয়াংশের বেশি কমেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।
শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসের ক্ষেত্রে বিশ্ব দারুণ এগিয়েছে গত ১৮ বছরে। ২০০০ সালে যেখানো ১৫ বছরের কমবয়সী ১ কোটি ৪২ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়েছে, সেখানে ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ৬২ লাখে দাঁড়িয়েছে। তার মানে, প্রায় দু’দশকে এই কমার হার ৫৬ শতাংশ।
ডব্লিউএইচওর মতে, শিশু বা মাতৃমৃত্যু হ্রাসে সাফল্য পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে, বেলারুশ, কম্বোডিয়া, কাজাখস্তান, মালাওয়ি, মরক্কো, মঙ্গোলিয়া, রুয়ান্ডা, পূর্ব তিমুর ও জাম্বিয়া।
স্বাস্থ্যকর্মী খাতে বিনিয়োগ, গর্ভবতী নারী ও শিশুদের জন্য বিনামূল্যে সেবা চালু এবং পরিবার পরিকল্পনায় সহায়তার মাধ্যমে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণে এ সফলতা এসেছে বলে জানায় ডব্লিউএইচও।
কয়েকটি দেশ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রতি নজর দিয়েছে।
“যেসব দেশ প্রত্যেককে নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও উচ্চ মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা দেয় সেখানে নারী ও শিশুরা বেঁচে যায় এবং সমৃদ্ধি লাভ করে। এটাই সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার শক্তি,” বলেন ডব্লিউএইচও-এর মহাপরিচালক ডা. টেডরস আডানম গেব্রিয়াসস।
তবে, এখনও যেতে হবে অনেকদূর। ২০১৮ সালেও ১৫ বছরের নিচের বয়সী ৬২ লাখ শিশু মারা গেছে। এই শিশুদের প্রায় অর্ধেকের মৃত্যু তাদের জীবনের প্রথম মাসে। তার মানে, প্রায় ৩০ লাখের বেশি শিশু। এই সংখ্যাসহ মোট ৫৩ লাখ শিশু মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হয়েছে ৫ বছর বয়স পেরুবার আগেই।
ওদিকে গর্ভধারণ ও প্রসব-সংক্রান্ত জটিলতায় মারা গেছেন ২ লাখ ৯০ হাজারের বেশি প্রসূতি।
প্রসবকালে ও তার পরের সময়টিতে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় থাকেন প্রসূতি ও নবজাতক। নতুন ডাটায় দেখা গেছে, গর্ভবর্তী ও নবজাতকদের মৃত্যুহার বছরে ২৮ লাখ বা প্রতি ১১ সেকেন্ডে একজন। যেসব কারণে এই মৃত্যুগুলো ঘটছে, তার বেশিরভাগই প্রতিরোধযোগ্য।
‘পৃথিবীজুড়ে শিশুর জন্ম এক আনন্দময় উপলক্ষ। তারপরও প্রতি ১১ সেকেন্ডে একটি জন্ম একটি পারিবারিক বিষাদে পরিণত হয়,” বলেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর।
জন্মের সময় মা ও নবজাতককে সাহায্যের জন্য এক জোড়া দক্ষ হাতের পাশাপাশি পরিষ্কার পানি, পর্যাপ্ত পুষ্টি, প্রাথমিক ওষুধ ও টিকা জীবন ও মৃত্যুর মাঝে ব্যবধান গড়ে দিতে পারে। এ মূল্যবান জীবনগুলো রক্ষা করতে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিনিয়োগে প্রয়োজনীয় সবকিছু আমাদের অবশ্যই করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বলছে, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হারে বিশ্বব্যাপী বিশাল পার্থক্য দেখা যায়। সাব-সাহারা আফ্রিকার শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার যথেষ্ট উচ্চ। উচ্চ আয়ের দেশগুলোর তুলনায় সাব-সাহারায় মাতৃমৃত্যুর হার প্রায় ৫০ গুণ বেশি। আর ১০ গুণ বেশি শিশু জীবনের প্রথম মাসে মারা যায়।