শুল্ক আদায়ে ই-পেমেন্টে আগ্রহী নয় আমদানিকারকরা
শুল্ক আদায় কার্যক্রম সহজীকরণ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ‘কাস্টমস ডিউটি ই-পেমেন্ট’ (ইলেকট্রনিক পেমেন্ট) পদ্ধতি চালু করলেও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে পুরোপুরি চালু হয়নি এই প্রক্রিয়া। কাস্টম হাউজ বলছে, এই প্রক্রিয়ায় শুল্ক পরিশোধে আমদানিকারক এবং তাদের মনোনীত সিএন্ডএফ এজেন্টরা আগ্রহী নন।
অন্যদিকে আমদানিকারক এবং সিএন্ডএফ এজেন্টরা বলছেন, ই-পেমেন্ট নিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের পক্ষ থেকে তেমন কোনো তৎপরতা নেই। অনেকেই এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগতও নয়। এছাড়া ডিউটি পেমেন্টের ক্ষেত্রে সিএন্ডএফ এজেন্টরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমদানিকারকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে। ই-পেমেন্টের মাধ্যমে শুল্ক পরিশোধ করলে তাদের অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের সুযোগ অনেকাংশে কমে যাবে।
এই পদ্ধতিতে আমদানি ও রপ্তানিকারক শুল্ক পরিশোধের ক্ষেত্রে ইউজার আইডি ব্যবহার করে আরটিজিএস (রিয়েল টাইম গ্রস সেলেটমেন্ট) গেইটওয়ের মাধ্যমে ঘরে বসেই শুল্ক পরিশোধ করতে পারবে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের আওতায় গত দুই বছরে ১৬৩টি প্রতিষ্ঠান ই-পেমেন্ট প্রক্রিয়ায় শুল্ক পরিশোধ করলেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এখনো পূর্বের নিয়মে শুল্ক পরিশোধ করছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট ই-পেমেন্ট সিস্টেম চালু করে এনবিআর। আর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ এই সেবার আওতায় আসে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ই-পেমেন্ট সিস্টেম চালু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১৬৩টি প্রতিষ্ঠান এই প্রক্রিয়ায় শুল্ক পরিশোধ করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইউনিলিভার, ইনসেপটা, এসিআই, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, এশিয়ান পেইন্ট, হোলসিম সিমেন্ট, নেসলে, বাটা, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, রবি, বাংলালিংক, ওয়ালটন ও স্কয়ার গ্রুপ অন্যতম।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের সিস্টেম এনালিস্ট মোহাম্মদ আহসান হাবিব সুমন বলেন, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ই-পেমেন্ট প্রক্রিয়ায় এক হাজার ৩৩০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। ওই অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায় হয় ৪৩ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের প্রায় তিন শতাংশ আসে ই-পেমেন্টের মাধ্যমে।
আহসান হাবিব সুমন আরও বলেন, ই-পেমেন্ট সিস্টেমে আমদানিকারক দেশের যে কোনো ব্যাংক থেকে শুল্ক পরিশোধ করতে পারবেন। তফসিলি ব্যাংকের যে শাখা থেকে শুল্ক পরিশোধ করা হবে সেই ব্যাংকের সঙ্গে সোনালী ব্যাংক চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ শাখার মধ্যে গেইটওয়ে হিসেবে কাজ করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরটিজিএস সিস্টেম। ই-পেমেন্টের একমাত্র গেইটওয়ে সোনালী ব্যাংক। অ্যাসাইকুডা সফটওয়্যারের মাধ্যমে (শুল্ক সংক্রান্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সফটওয়্যার) আমদানিকারকের ইউজার আইডি ব্যবহার করে এই প্রক্রিয়ায় শুল্ক পরিশোধ করতে সময় লাগবে দুই মিনিট।
তিনি আরও বলেন, ই-পেমেন্ট করতে ছয় ধরনের তথ্য প্রয়োজন হয়। বিল অব এন্ট্রি নম্বর, অর্থবছর, কাস্টম হাউজের অফিস কোড, পরিশোধকৃত শুল্কের পরিমাণ, এজেন্ট আইডেন্টিফিকেশন নম্বার (এআইএন) এবং ফোন নম্বর।
যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শুল্ক পরিশোধ করা হলে আমদানিকারকের ফোন নম্বরে শুল্ক পরিশোধ সংক্রান্ত কনফার্মেশন এসএমএস পৌছে যাবে। আর স্বয়ংক্রিয় ভাবে অ্যাসাইকুডা সফটওয়্যার নেটওয়ার্কে শুল্ক পরিশোধ সংক্রান্ত তথ্য আপডেট হবে।
চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম আখতার হোসেন বলেন, আমদানিকারকরা ই পেমেন্ট পদ্ধতিতে শুল্ক পরিশোধে তেমন আগ্রহী নয়। তাই কাস্টম হাউজে শতভাগ ই-পেমেন্ট সিস্টেমের আওতায় আসছেনা।
আমদানিকারক হাসান এন্ড ব্রাদার্স এর স্বত্তাধিকারী সরওয়ার আলম খান বলেন, ই-পেমেন্ট সিস্টেমে আমদানিকারকদের উদ্বুদ্ধ করতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না। সোনালী ব্যাংকের কাস্টম হাউজ শাখায় শুল্ক পরিশোধ করতে গিয়ে সময় ক্ষেপণ হয়। শুল্ক পরিশোধে সিরিয়াল আগে পেতে প্রতিনিয়ত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ই-পেমেন্ট পুরোপুরি চালু হলে ঘুষ লেনদেনের পরিমাণও কমে আসবে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, শুল্ক পরিশোধে ই-পেমেন্ট প্রক্রিয়ায় উদ্বুদ্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৬৩টি প্রতিষ্ঠান এই সেবার আওতায় এসেছে। আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টদের ই-পেমেন্টে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তবে সে তুলনায় তাদের তেমন আগ্রহ দেখা যায় না।
বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, কাস্টম ডিউটি ই পেমেন্ট নিয়ে এখনো আমদানিকারকরা অবগত নয়। অনলাইনে ডিউটি পেমেন্টের পর পরবর্তী সময়ে কোনো ঝামেলা তৈরি হয় কিনা এ নিয়ে আস্থার সংকট আছে। তাছাড়া ই পেমেন্টে অভ্যস্ত নয় তারা। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যদি এই বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা চালায় তাহলে কাস্টম ডিউটি ই-পেমেন্টে আমদানিকারকরা আগ্রহী হতে পারে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯৫% রপ্তানি এবং ৮৫% আমদানি হয়ে থাকে। তবে কতটি প্রতিষ্ঠান আমদানি রপ্তানির সঙ্গে জড়িত তার কোনো পরিসংখ্যান চেম্বারের কাছে নেই বলে জানান তিনি।