শ্রেণিকক্ষে ফিরেছে প্রাণ, ৫৪২ দিন পর খুলল দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
৫৪২ দিন পর আবারও খুলেছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সারাদেশে আজ (১২ সেপ্টেম্বর) রোববার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সশরীরে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হওয়া নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে দেখা গেছে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা। প্রায় দেড় বছর পর চিরচেনা ইউনিফর্ম, ব্যাগ কাঁধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে, ইউনিফর্মের সঙ্গে এবার শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান করতে হচ্ছে।
তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী সায়রা বান্ধবীর কাছ থেকে উপহার পেয়েছেন। দেড় বছর পরে তাদের সাথে দেখা হয়েছে। সায়রা টিবিএসকে বলেন, "এতদিন ঘরবন্দি মনে হয়েছে নিজেকে। আজকে বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছে। এ অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। অনলাইন ক্লাসে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। সরাসরি ক্লাসে এসে মনে হয়েছে প্রাণ ফিরে পেয়েছি।"
অবিভাবক আল মনসুর মো. নকী টিবিএসকে বলেন, "আমার মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিবে। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাই তা কেমন হলো, কীভাবে পরীক্ষা দিবে সেটার ধারণা নেওয়ার জন্য হলেও স্কুল খোলা দরকার ছিল। এখন সব খুলে দেওয়ায় স্বস্তি পাচ্ছি। কোভিডের সময়ে স্বাভাবিক সময়ের ক্লাসের মতো তো হয়নি। দেখা গেছে রাতেও অনলাইনে ক্লাস হয়েছে। এতে বাচ্চাদের পড়াশোনার আগ্রহটাও কমে গিয়েছিল।
সকাল সোয়া ৭টায় আল মনসুর মো. নকীর মেয়ে নিহা তাবাসসুমের ক্লাস শুরু হয় এবং পৌনে ৯ টায় শেষ হয়।
অভিভাবক সুলতানা করিম টিবিএসকে বলেন, "বিদ্যালয়ের ভিতরে বাচ্চাদের ফাঁক রেখে বসানো হচ্ছে, কিন্তু গেইটের বাহিরে অবিভাবকসহ সবাই গাদাগাদি করেই দাঁড়িয়ে থাকছে। এতে বাচ্চাদের বের হওয়ার সময় ঠেলে বের হতে হচ্ছে। অনেক দিন পরে স্কুল খুলেছে এটা যেমন আনন্দের তেমনি করোনা ভীতি থেকেই যাচ্ছে।"
এসএসসি পরীক্ষার্থী মার্জিয়া। তিনি বলেন, "মাঝে মাঝে অ্যাসাইনমেন্ট দিতে এসে বন্ধুদের সাথে দেখা হতো, কিন্তু আজকে একসঙ্গে ক্লাস করতে পেরে ভালোই লাগছে। তবে বিভিন্ন শিফট করে ক্লাস নেওয়ায় সবার সঙ্গে দেখা হয়নি।"
শিক্ষার্থী সানজেরী টিবিএসকে বলেন, "স্কুলেও কেমন যেন বন্দী অবস্থায় ক্লাস করতে হচ্ছে। ফাঁকা হয়ে বসছি, দুই ঘন্টা ক্লাস। এতে স্কুলের চিরচেনা স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরেও ভালো লাগছে যে স্কুলে আসতে পারছি।"
তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকেয়া সুলতানা টিবিএসকে বলেন, "আমরা ভিড় এড়াতে চারটি শিফটে ক্লাস নিচ্ছি। আমরা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বাচ্চাদের ক্লাস নিচ্ছি।"
প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত ও অন্যান্য অ্যাকাডেমিক নির্দেশনা প্রদান করা হবে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ কমায় সরকার দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হওয়ায় পুনরায় সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কাও করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসএসসি, এইচএসসি ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ছয়দিন ক্লাস করবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সময়কাল হবে চার ঘণ্টা। ফলে, দেশের প্রায় ৯০ হাজার শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে নিয়মিত ক্লাসে অংশ নিতে হবে।
এর বাইরে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের অন্যান্য শ্রেণির প্রায় তিন কোটি এক লাখ শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন ক্লাস করবেন।
আজ সকাল ১০টায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শন করবেন।