সর্বাত্মক লকডাউনে সাধারণ ছুটি, চালু থাকতে পারে রপ্তানিমুখী কলকারখানা
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ঘোষিত 'সর্বাত্মক লকডাউনে' ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের সাধারণ ছুটির ঘোষণা আসতে পারে। শুরুতে এক সপ্তাহের হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় পরে এটি আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোরও চিন্তাভাবনা আছে।
মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ কাজ করছে। সাধারণ ছুটির মধ্যে গণপরিবহন বন্ধ রাখাসহ অন্যান্য কী কী বিধিনিষেধ থাকবে, সেটি নিয়ে এখন কাজ চলছে। প্রজ্ঞাপনে এসব বিষয় স্পষ্ট জানানো হবে।
করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে সাধারণ ছুটিতে যেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল এবারও সে ধরনের ব্যবস্থা আসতে পারে।
গত বছর ২৬ মার্চ থেকে প্রথম দফায় ১০ দিনের সাধারন ছুটি ঘোষণা করা হলেও পরে কয়েক দফায় বাড়িয়ে ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি কার্যকর ছিল। প্রথমে জরুরি সেবা ছাড়া প্রায় সবকিছু বন্ধ থাকলেও একপর্যায়ে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানাসহ কিছু কিছু বিষয়ে ছাড় দেওয়া হয়।
গত শুক্রবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছিলেন, ১৪ এপ্রিল থেকে ৭ দিনের লকডাউনে জরুরি সেবা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস, যানবাহন, গার্মেন্টস কারখানাসহ সবকিছু বন্ধ থাকবে। তিনি জানান, লকডাউন চলাকালে কোনোভাবেই মানুষকে ঘরের বাইরে আসতে দেওয়া হবে না।
তবে পোশাক শিল্প মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে রপ্তানিমুখি কলকারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ইঙ্গিত মিলেছে। পোশাক শিল্প মালিকদের দাবি, কারখানা বন্ধ করলে ক্রয়াদেশ হারাবে বাংলাদেশ। তাছাড়া শ্রমিকরা ছুটিতে গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা দিলে সংক্রমণ আরও বাড়বে।
রোববার বিকেলে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়। এতে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম ও নবনির্বাচিত সভাপতি ফারুক হাসান, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রমুখ অংশ নেন। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি ও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, '১৪ এপ্রিল থেকে সম্পূর্ণ লকডাউন হলেও শিল্প কারখানা চলবে। মন্ত্রী পরিষদ সচিব আমাদের নিশ্চিত করেছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'লকডাউনে শিল্প কারখানা ছাড়া সব বন্ধ থাকবে। মানুষের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ ছাড়া ব্যাংক বন্ধ থাকতে পারে। তাতে আমদানি রপ্তানিতে সমস্যা হবে। এ বিষয়েও পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব।'
বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, এই সময়ে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালাতে বলা হয়েছে। যেসব শ্রমিক কারখানা থেকে দূরে বসবাস করেন তাদের কারখানার নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় আনা-নেওয়া করতে হবে। কোনো শ্রমিক অসুস্থ হলে তার চিকিৎসাসহ সব কিছু কারখানা মালিক দেখবেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিজিএমইএর নিজস্ব পিসিআর ল্যাবে নিয়মিত সন্দেহভাজন শ্রমিকের করোনা পরীক্ষা করা হবে৷
অবশ্য সরকার এ বিষয়ে এখনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। এ প্রতিবেদন তৈরির সময় পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
এর আগে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে লকডাউনে পোশাক ও বস্ত্র কারখানা খোলা রাখার দাবি জানায় পোশাক খাতের চার সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ ও ইএবি।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, প্রথম ধাপের চলমান সাতদিনের লকডাউন একই নিয়মে ১২ ও ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকবে। আর ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হবে।
মন্ত্রীপরিষদ বিভাগও একই কথা জানিয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ২৯ মার্চ জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১৮ দফা নির্দেশনা বলবৎ থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ৪ ও ৮ এপ্রিলের নির্দেশনাও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।