সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত 'মানবতার ফেরিওয়ালা' মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ
করোনার হটস্পট নারায়ণগঞ্জে করোনায় আক্রান্ত মৃতদেহ সৎকার করে দেশে-বিদেশে বহুল আলোচিত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, উপাধি পান 'মানবতার ফেরিওয়ালা'। কিন্তু এবার নিজেই মহামারি করোনায় আক্রান্ত হলেন তিনি। এর আগে গত ২২ মে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা। তারা দুজনেই এখন আইসোলেশনে আছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাউন্সিলর খোরশেদ নিজেই। গতকাল শনিবার বিকাল ৫টা ৩৭ মিনিটে নিজের ফেসবুক আইডিতে লাইভে এসে করোনা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।
লাইভে এসে খোরশেদ বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আমি করোনায় আক্রান্ত। আপনার সবাই দোয়া করবেন। আমি শারীরিকভাবে ঠিক আছি।
নগরবাসীকে তিনি জানান, তিনি করোনায় আক্রান্ত হলেও লাশ দাফন ও সৎকার টেলিমেডিসিন সেবাসহ যে সকল মানবিক সহায়তা চালিয়ে গেছেন তা তার টিম অব্যাহত রাখবেন।
প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত খোরশেদ ও তার টিম ৬১ টি লাশ কবরস্থ ও সৎকার করেন। করোনার সময়ে এই কাউন্সিলরের কার্যক্রমের প্রশংসা দেশ ছাড়িয়ে বিশ্ব মিডিয়ায়ও উঠে আসে। তিনি ও তার স্ত্রী আক্রান্ত হলেও তার সব কার্যক্রম অব্যাহত রাখবেন বলে জানান।
করোনার হটস্পট নারায়ণগঞ্জে করোনার উপসর্গ নিয়ে বা করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে পরিবারের লোকজন যখন সৎকার করতে ভয়ে এগিয়ে আসেনি, ঠিক সেই সময় এগিয়ে আসেন মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। গত ৯ এপ্রিল থেকে ৩০শে মে পর্যন্ত মোট ৬১ জন করেনায় আক্রান্ত বা করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া মৃতদেহ সৎকার করেন কাউন্সিলর খোরশেদ ও তার দলের সদস্যরা।
এর আগে গত ৯ মার্চ থেকে করেনায় ভয়াবহ পরিস্থিতি বাংলাদেশের শুরু হওয়ার পর থেকেই বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন থেকে ফর্মুলা সংগ্রহ করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি সহ বিভিন্ন স্থানে বিতরণ করেন।
এছাড়া ক্লোরিনযুক্ত পানি বিভিন্ন বাড়িঘর রাস্তাঘাট ছিটিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করে নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেন।
পরবর্তীতে তার দেখাদেখি সিটি কর্পোরেশন অন্য কাউন্সিলরসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার কাছ থেকে ফর্মুলা নিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানিয়ে বিতরণ করেন।
এছাড়া করেনা চলাকালীন সময়ে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ থেকে শুরু করে টেলিমেডিসিন সেবা প্রদানের জন্য একটি ইউনিট গঠন করেন কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। তার এই কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার ও তার দলের সদস্যরা।
আফরোজা খন্দকার করোনা পজিটিভ আক্রান্ত হওয়ার পরে দিনদিন তার অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। পরে গত ২৮ মে নিজেই নমুনা পরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালে নমুনা দিয়ে আসেন তিনি।
গতকাল শনিবার নমুনার পরীক্ষার রিপোর্টে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে।
কাউন্সিলর খোরশেদ টেলিফোনে জানান তিনি করনা আক্রান্ত হলেও শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। তবে তার স্ত্রীর অবস্থা বেশি ভাল নয়। ১০২ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তিনি নারায়ণগঞ্জবাসীসহ সবার কাছে তার স্ত্রী ও নিজের জন্য দোয়া চেয়েছেন।