সাতক্ষীরায় নির্বাচনে বিসর্জিত “ভালোবাসা দিবস”
বিশ্ব ভালোবাসার দিবসের দিনই সাতক্ষীরা পৌরসভার নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে ব্যস্ত শহরবাসী। এবার ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে তরুন-তরুনীদের সঙ্গে বিপাকে পড়েছেন ফুল ব্যবসায়ীরাও। ফুলের দোকানে নেই উল্লেখযোগ্য ক্রেতা। ভালোবাসা দিবসে লাভের আশায় দোকানে ফুল এনেছিলেন ব্যবসায়ীরা তবে গুনতে হচ্ছে লোকসান। অন্যদিকে, তরুণরা বলছেন, নির্বাচনকে ঘিরে এ বছর ভালোবাসা দিবস বিসর্জনে গেছে।
সাতক্ষীরা শহরের লাবনী মোড়ে ফুলের দোকান। শনিবার বিকেলে দেখা যায় দোকানগুলোতে নেই বাড়তি ক্রেতাদের ভিড়। ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে নেই বাড়তি বেচা-বিক্রি। নেই তরুণ-তরুণীদের আনাগোনা।
ফুল ব্যবসায়ী পারভেজ হাসান জানান, 'করোনাকালীন সময়ে ফুলের বেচাবিক্রি এমনিতেই কম। ফুল ব্যবসায়ীরা একেবারেই শেষ হয়ে গেছে। কর্মচারিদের বেতন দিতে পারে না। ভালোবাসা দিবসের সময় ফুলের বিক্রি বেশী হয়। তবে এ বছর ভালোবাসা দিবসের দিনই পৌরসভার নির্বাচন হওয়ায় ভালোবাসা দিবসের কোন উৎসাহ নেই। বাড়তি কোন বেচাবিক্রিও নেই। লোকসানে পড়তে হচ্ছে ফুল ব্যবসায়ীদের'।
সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম জানান, 'এ বছর ভিন্ন আঙ্গিকে ভালোবাসা দিবস পালন করতে হবে পৌর এলাকার তরুণ-তরুণীদের। যেহেতু নির্বাচনকে ঘিরে শহরে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। তরুণ-তরুণীরা ভালোবাসা দিবস পালন করতে বের হতে পারবে না। অনেকেই ভালোবাসা দিবস উদযাপনকে বিসর্জন দিচ্ছেন তাছাড়া বিকল্প কোন উপায় নেই তাদের'।
দ্যুতিদ্বীপন বিশ্বাস জানান, 'ফুলের দাম বাজারে এখন অনেক বেশী। এক পিস গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়, রজনীগন্ধা ১২ টাকায়। একটি গোলাপ আগে বিক্রি হতো ৭-৮ টাকায়, রজনীগন্ধা ৩-৪ টাকায়'।
লাবনী মোড় এলাকার সুগন্ধা ফুলের দোকানের ফুল বিক্রেতা সুশীল দাস জানান, 'এক লাখ টাকার ফুল এনেছি। এখনো ২০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হয়নি। ভালোবাসা দিবস ও নির্বাচন একদিনে পড়ায় সব থেকে বেশী ক্ষতি হয়েছে। করোনার থেকেও নির্বাচনের জন্য ভালোবাসা দিবসের ফুল বাজারটা আমরা মিস করছি'।
তিনি বলেন, 'ধারণা করেছিলাম, দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ফুল বিক্রি হবে। এখন দেখছি যে টাকার ফুল এনেছি সে টাকার বিক্রি হচ্ছে না। সব মিলিয়ে অনেক বড় লোকসান হয়ে গেল ফুল ব্যবসায়ীদের। স্কুল কলেজের দুই একজন শিক্ষার্থী ছাড়া কারো দেখা পাচ্ছি না। কেউ ফুল কিনতে আসছে না'।
সাতক্ষীরা ফুলের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুস সালাম জানান, 'জেলা সদরে মাত্র চারটি ফুলের দোকান রয়েছে। করোনার শুরু থেকেই নেই বেচাবিক্রি। দোকানের কর্মচারিদের বেতন দিতে পারে না ব্যবসায়ীরা। সরকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণ দিচ্ছে অথচ সেই ঋণ কারা নিচ্ছে বা কারা পাচ্ছে আমরা জানি না। আমরা ফুল ব্যবসায়ীরা কোন ঋণ পাইনি। এখন ভালোবাসা দিবসের দিনই পৌরসভার নির্বাচন হচ্ছে এতে করে বাড়তি যে ফুল বিক্রি হতো সেটিও হচ্ছে না। ফুলের দামও বেশী। ফুল ব্যবসায়ীদের লোকসানের যেন শেষ নেই।
সাতক্ষীরা জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা (বিপনন) সালেহ মো. আব্দুল্লাহ জানান, 'করোনাকালীন সময়ে ফুল ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে এটি সঠিক। তাছাড়া ভালোবাসা দিবসেও তাদের বাড়তি আয়ের এ বছর সুযোগটাও বন্ধ হয়ে গেছে , কেননা এদিনই পৌরসভার নির্বাচন। কিছু ক্ষতি মেনে নিতেই হয়'।
তিনি বলেন, 'যারা ফুল কিনবে ভালোবাসা দিবস উদযাপনের জন্য তারা কিন্তু ঠিকই ফুল কিনবে ও প্রিয়জনকে দিবে। তবে এবার নির্বাচনী কারণে একটু কম হবে। শহরের দোকানপাট খোলা থাকবে'।