সারা দেশে বাস চলাচল শুরু, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ
দীর্ঘ দুই মাস পর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আতঙ্কের মধ্যেই সোমবার সকাল ৬টা থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে যান চলাচল।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিবহন শ্রমিক নেতারা আসন প্রতি ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি নেওয়ার দাবি করলেও যাত্রীদের অভিযোগ দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে, প্রশাসন ও পরিবহন শ্রমিকদের পক্ষ থেকে জানানো হলেও কোথাও কোথাও এর ব্যতয় ঘটতে দেখা যাচ্ছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট।
খুলনা থেকে যান চলাচল শুরু, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ
সকালে নগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, অনেক যাত্রী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার জন্য সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে এসেছেন। টিকিট কাউন্টারগুলো থেকে টিকিট কেটে যাত্রীরা বাসে ওঠার সময় তাদের মুখে মাস্ক আছে কিনা দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া তাদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও পায়ে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়। সকালে যাত্রীদের সংখ্যা কম দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
তবে কাউন্টারগুলোর সামনে খুব কম যাত্রীকেই শারীরিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়।
দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়ায় অনেক যাত্রী ও বাস শ্রমিকদের পরস্পরের সঙ্গে করমর্দন ও কোলাকুলি করতেও দেখা যায়।
এদিকে, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিবহন শ্রমিকরা আসন প্রতি ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি নেওয়ার দাবি করলেও যাত্রীদের অভিযোগ তাদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
স্বাভাবিক সময়ে খুলনা-পাইকগাছা রুটে একেকজন যাত্রীর বাস ভাড়া ৯০টাকা। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৬০ শতাংশ বৃদ্ধিতে বাস ভাড়া নেওয়ার কথা ১৫০টাকা। সেখানে নেওয়া হচ্ছে ১৮০টাকা। এ ছাড়া স্বাভাবিক সময়ে খুলনা থেকে যশোরের ভাড়া ৯০টাকা। সেখানে নেওয়া হচ্ছে ১৮০টাকা।
খুলনা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব বলেন, কোনো যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে সেই গাড়ির চালক-হেলপার ও গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে রংপুরে বাস চললেও ভাড়া বেশি
স্বাস্থ্য বিধি এবং বর্ধিত ভাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রংপুর থেকে ঢাকাগামী বাস যাত্রীরা। আর স্বাস্থ্য বিধি মেনেই চলাচল করছে বাস, বলছেন বাস কাউন্টার মাস্টার রতন মিয়া।
এদিকে ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে দাবি যাত্রীদের। ঢাকাগামী যাত্রী সুলতানা আরফিন জানান, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। আগে ভাড়া ছিল ৫০০ টাকা। সে হিসেবে ৬০ শতাংশ বেড়ে ভাড়া হওয়ার কথা ৮০০ টাকা। কিন্তু তারা নিচ্ছে ৯০০ টাকা। এ বিষয়ে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মহিদুল ইসলাম জানান, বাসচালক ও যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধির ব্যপারে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
ময়মনসিংহে বাস কাউন্টারে ভিড়
ময়মনসিংহ থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়েছে। স্থাস্থ্য বিধি মেনে বাসে প্রতি দুই আসনে একজন বসছেন। তবে টিকিট কাউন্টারে ভিড় দেখা গেছে।
সঠিক ভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে দেখা যায়নি।
পরিবহনের ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা ময়মনসিংহ রোডে প্রতি টিকিট ২২০ টাকার জায়গায় ৩৫০ টাকা করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ মটর মালিক সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন মন্তা জানান, প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিধি না মেনে যাত্রী পরিবহন করার কোনো সুযোগ নেই। স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি মনিটর করছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে গণপরিবহন
সোমবার সকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর বাস টার্মিনাল ও পৈরতলা বাস স্ট্যান্ড এবং সরাইল বিশ্বরোড মোড় থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও হবিগঞ্জের মাধবপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে গেছে। তবে কোনো বাসই সরকারের দেয়া স্বাস্থ্য বিধি বানছে না। এর ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
সোমবার দুপুরে সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। বাস গুলোতে ২০ জন যাত্রী পরিবহনের কথা থাকলেও অধিক যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকার ভাড়া ৩২০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
তবে কোনো বাসেই জীবাণুনাশক ও যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র দেখা যায়নি।
রফিক মিয়া নামে এক যাত্রী জানান, বাস কাউন্টারে যাত্রীদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়নি। ২০ জন যাত্রী পরিবহনের কথা থাকলেও অতিরিক্ত যাত্রী তুলছেন বাসের কর্মচারীরা।
জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ বলেন, কোনো বাসে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হচ্ছে না। যাত্রীদের সুরক্ষার জন্য বাস কাউন্টারগুলোতে হ্যান্ড সেনিটাইজারের ব্যবস্থা থাকলেও তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র এখনও সংগ্রহ করতে পারেননি বলে জানান তিনি।
টাঙ্গাইলে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই গণপরিবহন চলাচল
গণপরিবহন চালুর প্রথম দিনেই বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরবঙ্গের ১৭টিসহ মোট ২৩ জেলার যানবাহন ঢাকার দিকে যাচ্ছে। তবে কোনো যানবাহনের যাত্রীরা অনেকক্ষেত্রেই পরিপূর্ণভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না। কোনো কোনো বাসে যাত্রীদের মাস্ক ছাড়াও যানবাহনে চলাচল করতে দেখা গেছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়ে পুলিশের কোন চেকপোস্ট না থাকায় স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই গণপরিবহন চলাচল করছে।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম জানান, মহাসড়কগুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট উঠে গেলেও সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন যাতে চলাচল করে এই ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে জনসচেতনামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে। কোন পরিবহন বা যাত্রীরা কেউ স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বগুড়ায় সরকারি নির্দেশনা নিশ্চিতে কাজ করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত
বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া কোচ স্ট্যান্ড থেকে সকালে রাজধানী ঢাকায় যেসব কোচ রওনা হয়েছে তার সবগুলোতেই যাত্রীদের জন্য সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হয়। কিন্ত যাত্রী বা পরিবহন শ্রমিকসহ অন্যান্যদের শরীরের তাপমাত্রা মাপার কোনো ব্যবস্থা দেখা যায়নি।
বগুড়া জেলা মটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর ইসলাম জানান, সরকার নির্ধারিত নিয়ম মেনে যারা গাড়ি চালাবেন না তাদের জন্য সংগঠন কোনো দায়িত্ব নেবে না।
জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মেদ জানান, সরকারি নির্দেশনা মানা হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ শুরু করেছে।
''পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কোচ টার্মিনালের পরিবেশে আমরা খুশি'' যোগ করেন তিনি।
বগুড়া কোচ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ১৬৫টি কোচ ঢাকায় যায়। আর বগুড়ার ওপর দিয়ে বিভিন্ন রুটে প্রায় ২৫০০টি কোচ যায় বলে জানান পরিবহন ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা।
রাজশাহীতে দূরপাল্লার গাড়িতে স্বাস্থবিধি মানা হলেও উল্টো চিত্র আন্তঃজেলা রুটে
রাজশাহীতে দূরপাল্লার প্রতিটি বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও আন্তঃজেলা রুটের বাসগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। আন্তঃজেলা রুটে গাদাগাদি করে বাস নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
ঢাকাগামী বাস টার্মিনাল শিরোইল বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, মোট আসনসংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে বাস ও ট্রেন। যাত্রা শুরুর পূর্বে প্রতিটি বাসেই করা হচ্ছে জীবাণুনাশক স্প্রে। এ ছাড়া কাউন্টারেও করা হচ্ছে জীবাণুনাশক স্প্রে। বাস ও কাউন্টারে প্রবেশের পূর্বে করা হচ্ছে তাপমাত্রার পরীক্ষাও। তবে কাউন্টারে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে দেখা যায়নি। ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়া নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে যাত্রীদের মধ্যে।
ন্যাশনাল ট্রাভেলসের ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন কাজল বলেন, ঠিকমত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বাস চলাচল করছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দূরপাল্লার ও আন্তঃজেলা বাস চলাচল সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে। অন্য স্বাভাবিক সময়ে রাজশাহী থেকে ২৫০ টি বাস চলাচল করলেও এখন ১০০ থেকে ১৫০ টি বাস চলাচল করছে।
এছাড়া রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মোট আসনসংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়েই ট্রেন চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী রেলস্টেশনের সুপারিন্টেন্ডেন্ট আব্দুল করিম।
তিনি বলেন, ট্রেনে মোট আসনসংখ্যা ৯৮৭ টি। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে ৪৯৭ সিটে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে ঢাকায় চলাচল করছে। প্রত্যেক যাত্রীকে প্রথমে জীবাণুকক্ষে প্রবেশ করিয়ে স্প্রে করা হয় তারপর তাপমাত্রা মেপে ট্রেনে উঠানো হয়।
সাতক্ষীরায় স্বাস্থবিধি মানছে না কেউ, রয়েছে বাড়তি ভাড়ার খড়গ
সরকারি সিদ্ধান্তের পর সাতক্ষীরায় চালু হয়েছে বাস চলাচল। তবে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানছেন না কেউ।
সাতক্ষীরা জেলা সদরসহ উপজেলাগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এছাড়া ভাড়া বেশী নেওয়ার কারণে যাত্রীবাহী বাসে উঠতে চাইছেন না যাত্রীরা।
বাস শ্রমিকরা বলছেন, সরকারি নির্দেশনা মেনেই তারা ভাড়া নিচ্ছেন।
সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বেলা ১২টায় গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীরা যাতায়াত করছেন স্বাভাবিক নিয়মে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিদ দূরত্ব মানছেন না যাত্রী ও বাস শ্রমিকরা।
সাতক্ষীরা-খুলনা বাসের এক সুপারভাইজার জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আগে ভাড়া ছিল ৯৬ টাকা এখন আমরা ভাড়া নিচ্ছি ১৫০ টাকা। তবে ভাড়া বেশী নেওয়ার কারণে যাত্রীরা বাসে উঠতে চাইছেন না। সরকারি নির্দেশনা মেনে এক সিটে একজনের বেশী আমরা কাউকে নিচ্ছি না।
সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের বাস শ্রমিক আব্দুল্লাহ জানান, সাতক্ষীরা থেকে যশোরের ভাড়া আগে ছিল ৮০ টাকা এখন আমরা ১৫০ টাকা করে নিচ্ছি।
সাতক্ষীরা থেকে খুলনার বাসযাত্রী আবুল হোসেন বলেন, আগে ৯০ টাকা করে সাতক্ষীরা থেকে খুলনা গিয়েছি। এখন ১৫০ টাকা নিচ্ছে। ভাড়া বেশী নিচ্ছে।
সিলেটে যাত্রী কম
সোমবার সকালে সিলেট থেকেও শুরু হয়েছে যাত্রীবাহী বাস চলাচল। দূরপাল্লার পাশাপাশি আন্তঃজেলা বাস চলাচলও শুরু হয়েছে সকাল থেকে। তবে যাত্রী সংখ্যা ছিলো অপেক্ষাকৃত কম। বাস টার্মিনালে ছিল না চিরচেনা ভিড়।
সোমবার দুপুরে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনাল থেকে একে একে ছেড়ে যাচ্ছে দূরপাল্লার ও আন্তঃজেলা বাসগুলো। দূরপাল্লার বাসগুলোতে সামাজিক দুরত্বের বিষয়টি মানা হলেও আন্তজেলা বাসে তা লঙ্ঘিত হচ্ছে।
সিলেট থেকে বাসে করে শ্রীমঙ্গল যাওয়া আব্দুল জব্বার নামের এক যাত্রী বলেন, বাসে হেলপারের হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রয়েছে। তবে তা যাত্রীদের তেমন দেওয়া হচ্ছে না। আর আগের মতো হেলপার হাতে ধরে ধরে টেনে ও পিঠে ধরে বাসে তুলছে। ফলে ঝুঁকি বাড়ছে।
তিনি বলেন, আগে সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত ভাড়া ছিলো ১৩০ টাকা। আজ তা বাড়িয়ে ১৯০ টাকা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক বলেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্ব মেনেই বাস চালাচ্ছি। সিট সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী তোলা হচ্ছে। তাছাড়া আজ যাত্রী সংখ্যা কম হওয়ায় অনেক বাস অর্ধেক যাত্রীও পাচ্ছে না।
লঞ্চে যাত্রী পরিবহনে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্য বিধি
দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর রোববার থেকে বরিশাল নৌপথে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত বরিশাল নদী বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ ১২ টি রুটে যাত্রী নিয়ে ১৫ টি লঞ্চ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে।
তবে লঞ্চের ভেতর বা পন্টুনে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। শারীরিক দূরত্ব তো দূরের কথা, মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
সোমবার বরিশাল নদী বন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, লঞ্চের ভেতর অনেক যাত্রীরই মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস পরেননি। শারীরিক দূরত্ব না মেনে কাছাকাছি বসে রয়েছেন। বিশেষ করে ভোলা থেকে বরিশালে আসা লঞ্চগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি বেশি উপেক্ষিত হচ্ছে।
জীবানুনাশক স্প্রে বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই এসব লঞ্চে। যাত্রীদেরও কেউবা মাস্ক না পড়েই যাত্রা করছেন। নদী বন্দরে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ পুলিশ সদস্যদের উদাসীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হলে তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বরিশাল কার্যালয়ে যুগ্নপরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার জানান, সোমবার সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বরিশাল নদী বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ ১২টি রুটে যাত্রী নিয়ে ১৫ টি লঞ্চ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। সন্ধ্যার পর ৫ টি বড় লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ঢাকা উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, যাত্রীবাহী লঞ্চ যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চমালিকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জীবাণুনাশক টানেল ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জীবাণুনাশক দ্রব্য ছিটানো হচ্ছে। তবে অনেক যাত্রী স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।
দিনাজপুরে বাস চলাচল শুরু, মানা হচ্ছে না সামাজিক দুরত্ব
সারা দেশের ন্যায় দিনাজপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে সকাল থেকেই বিভিন্ন রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল শুরু হয়েছে।
সোমবার সকালে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় জেলার বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাস গুলোতে স্প্রে মেশিন দিয়ে স্প্রে করা হচ্ছে। পাশাপাশি হাত ধোয়ার জন্য সাবান পানি রাখা থাকলেও সামাজিক দুরুত্ব মানা হচ্ছে না।
গণপরিবহন বাস গুলোতে যাত্রী উঠানামার ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা মাস্ক ও ২ সিটে এক জন করে বাসে বসা হচ্ছে এবং সরকারের নির্দেশনা ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
দীর্ঘদিন কর্মহীন হয়ে থাকা সাধারণ যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া প্রদান করতে অনীহা প্রকাশ করেছে।
দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, এটা মালিক সমিতি দেখবে। জেলা প্রশাসন থেকে মিটিং করে যথাযথ নিয়মগুলো মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে। সেভাবেই তারা সরকারী সিদ্ধান্ত মোতাবেক যানচলাচল করবে। কারণ স্বাস্থ্য বিভাগের ওই পরিমাণে জনবল নেই।
সামাজিক দূরত্ব না মানায় লঞ্চ সুপারভাইজারকে জরিমানা
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ি সামাজিক দূরত্ব না মেনে অতিরিক্ত যাত্রীবহনের দায়ে পটুয়াখালী থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন-৮ লঞ্চের সুপারভাইজারকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল ইসলাম।
রোববার সন্ধ্যায় পটুয়াখালী লঞ্চঘাট পরিদর্শনে এসে এই জরিমানা করেন তিনি। জরিমানার টাকা দিতে না পারায় সুপারভাইজার আনোয়ার হোসেনকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল ইসলাম জানান, জরিমানার টাকা পরিশোধ করলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দেয় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। ফলে পটুয়াখালী থেকে ঢাকামুখী হাজার তিনেক যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েন। পরে প্রশাসন সুপার ভাইজারকে মুক্তি দিলে রাত ১০ টায় সুন্দরবন-৮ ও এমভি রাসেল নামের লঞ্চ দুটি ঢাকার উদ্দেশ্যে পটুয়াখালী ঘাট ত্যাগ করে।