সিনহা হত্যা মামলা: বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিভিশন আবেদন আদালতে খারিজ
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলাটি অবৈধ দাবি করে এর বাতিল চেয়ে প্রধান আসামী পরিদর্শক লিয়াকত আলীর আইনজীবীর দায়ের করা রিভিশন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক ও শুনানী শেষে আবেদনটির গ্রহণযোগ্যতা না থাকায় খারিজ করে দেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছের বাদী পক্ষের আইনজীবী কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।
রোববার বেলা ২টার দিকে এ বাতিল আদেশ দেন জেলা জজ। একই দিন সকালে ওসি প্রদীপসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে সিনহা হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি খায়রুল আলম। এর কয়েক ঘণ্টা পর সিনহা হত্যা মামলা অবৈধ ঘোষণার আবেদন খারিজ করা হলো।
তবে পরিদর্শক লিয়াকতের আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দীন জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তারা পুনরায় উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন।
গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের দিকে আসার পথে বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে তল্লাশির নামে গাড়ি থেকে নামিয়ে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। আলোচনা হয় বিদেশেও। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন ও নিরাপত্তা বিভাগ। তখনই তদন্তের স্বার্থে টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলিসহ সকল পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।
এ ঘটনায় ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে, যিনি সিনহাকে গুলি করেছিলেন। টেকনাফ থানার ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয়েছে ২ নম্বর আসামি।
এজাহারে বলা হয়েছে, গুলি করার আগে লিয়াকত তার সঙ্গে ফোনে পরামর্শ করেছিলেন। ওসির 'প্ররোচনা ও নির্দেশনাতেই' লিয়াকত ঠাণ্ডা মাথায় সিনহাকে গুলি করে হত্যা করেন। পরে প্রদীপ ঘটনাস্থলে গিয়ে সিনহার 'মুখমণ্ডল ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পায়ের জুতা দিয়ে আঘাত করে' বিকৃত করার চেষ্টা করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় তার বোনের দায়ের করা মামলাটি বে-আইনি ও অবৈধ ঘোষণা চেয়ে গত ৪ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রধান আসামি লিয়াকতের আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দিন রিভিশন আবেদন দায়ের করেন। ওই দিন আদালত মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানীর জন্য ২০ অক্টোবর দিন ধার্য্য করেন। কিন্তু শুনানীর ওই নির্ধারিত দিনে সিনহা হত্যার মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস অসুস্থতার কারণে আদালতে উপস্থিত থাকতে না পারায় পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য্য করেন ১০ নভেম্বর।
অন্যদিকে, মামলাটি শুনানীর ওই নির্ধারিত দিনে (১০ নভেম্বর) বে-আইনি ও অবৈধ ঘোষণা চেয়ে আবেদনকারি পক্ষের আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানীর দিন আবারও পিছিয়ে যায়। সেদিন দিন ধার্য্য হয় ১৩ ডিসেম্বর। সেই মতে আজ (রোববার) দু'পক্ষের শুনানির পর কক্সবাজারের জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আসামী পক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।