সিলেট ওসমানী হাসপাতাল: সঙ্কটকালেও অব্যবহৃত পড়ে আছে ৪৫০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট
গতবছরের ডিসেম্বরে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের ৪র্থ ও ৫ম তলার ৪৫০ শয্যা করোনা আইসোলেশন ইউনিট হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সে অনুযায়ী সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছিলো। কিন্তু সিদ্ধান্তের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত চালু হয়নি এই আইসোলেশন ওয়ার্ড।
এরমধ্যে সিলেটে দ্রুত বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। বাড়ছে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। শনাক্ত হওয়া ও উপসর্গ থাকা রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। সিলেটের সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালেই করোনা রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত শয্যা খালি নেই। ফলে বিপাকে পড়ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
তবে এমন সময়েও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের ৪৫০ শয্যা।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন ভবনের ৪র্থ ও ৫ম তলায় ৪৫০ শয্যা সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন লাইনের ব্যবস্থা না থাকায় এগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
তাদের মতে, করোনা ও করোনার উপসর্গ থাকা রোগীদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় সবচেয়ে বেশি। তাই আইসোলেশন ইউনিট হিসেবে চালুর আগে অক্সিজেন লাইন সংযোজন করা প্রয়োজন।
এ অবস্থায় গত ৪ আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেকের কাছে একটি চাহিদা (ডিও লেটার) প্রেরণ করেছেন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
ডিও লেটারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, সারা দেশের ন্যায় অতি সম্প্রতি সিলেটেও করোনা মহামারি প্রকট আকার ধারণ করেছে। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ ভবন ঊর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণের মাধ্যমে ৩য় তলা থেকে ১০ তলায় উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু ভবনটিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন সংযোজন করা হয়নি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী লেখেন, ভবনটির ৪র্থ ও ৫ম তলা করোনা আইসোলেশন সেন্টারের জন্য সাড়ে ৪শ শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু কেবলমাত্র সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন সংযোজন না থাকায় আইসোলেশন সেন্টার চালু করা যাচ্ছে না।
এই মহামারিকালে সিলেটের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে ভবনটির ৪র্থ ও ৫ম তলায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন সংযোজনের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বাস্থ্য অধিপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্য মতে, শনিবার পর্যন্ত সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ৪৯৮ জন রোগী। করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন তারচেয়েও বেশি।
নগরের সরকারী দুই প্রতিষ্ঠান শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ৮৪টি ও সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ২৫০টি সাধারণ শয্যা রয়েছে। এর বাইরে বেসরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোর আইসোলেশন ওয়ার্ডগুলোতে আরও প্রায় ২০০টি সাধারণ শয্যা রয়েছে। তবে সবগুলো হাসপাতালই রোগীতে পূর্ণ। ফলে নতুন রোগীরা ভর্তি হতে বিপাকে পড়ছেন। এমন অবস্থায়ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন লাইনের অভাবে ওসমানী হাসপাতালের ৪৫০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট চালু না করা যাচ্ছে না।
জানা যায়, ওসমানী হাসপাতালের সম্মুখভাবে নবনির্মিত দশতলা ভবনটি বছর দুয়েক আগে বুঝে পায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর ভবনটির নিচ তলায় হাসপাতালের বহির্বিভাগের কার্যক্রম স্থানান্তরিত হয়। এই ভবনের ৪র্থ ও ৫ম তলায় প্রস্তুত করা হয় নতুন ৪৫০ শয্যা। গত বছরের ডিসেম্বরে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এই শয্যাগুলো করোনা আইসোলেশন ইউনিট হিসেবে চালুর সিদ্ধান্ত হয়।
তবে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন লাইন না থাকায় এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে বাড়তে থাকে করোনা শনাক্তের সংখ্যা। হাসপাতালের ধারণক্ষমতার চাইতে বেশি রোগী আসতে শুরু করে। এ অবস্থায় মাস দুয়েক আগে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নতুন ভবনে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন লাইনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে এ প্রস্তাবে এখন পর্যন্ত সাড়া দেয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, "পাঁচতলা এ ভবনে ৪৫০ ওয়ার্ড করোনা আইসোলেশন করার উপযোগী। সব কিছু প্রস্তুত। কেবল মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এবং কেন্দ্রীয় অক্সিজেন লাইন প্রয়োজন। গত জানুয়ারি মাস থেকে আমরা মন্ত্রণালয়ে বারবার চিঠি দিয়েছি। এটা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে ডিও লেটার দিয়েছেন। আশা করছি শীঘ্রই অক্সিজেন লাইনের ব্যবস্থা হয়ে যাবে"।
কেন্দ্রীয় অক্সিজেন লাইন স্থাপনে প্রায় ৪ কোটি টাকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ওসমানী মেডিকেল কলেজের উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলম। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সিলেটের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গত ৩ আগস্ট বিভিন্ন দপ্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে জরুরী সভার আয়োজন করে সিলেট সিটি করপোরেশন। এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন সিলেট-১ আসনের সাংসদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। এ বৈঠকেও ওসমানী হাসপাতালের নতুন ভবনে দ্রুত কেন্দ্রীয় অক্সিজেন লাইনের ব্যবস্থা করার দাবি উঠে।
এ প্রসঙ্গে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, "এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছেন। আমিও চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো পদক্ষেপ মেলেনি। এ ব্যাপারে যদি দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে সিলেটের অবস্থা আরও খারাপ হবে"।