স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে উঠে এলো বাস ভাড়ায় অনিয়ম
ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পর বাস ও ট্রাক মালিকরা যথেচ্ছভাবে ভাড়া বাড়ানোয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বাড়তি ভাড়ার কারণে মানুষের যাতায়াত ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাসের পুনঃনির্ধারিত ভাড়া কার্যকর করা না গেলে পরিবহনখাতে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাবে উল্লেখ করে গত ১ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।
প্রতিবেদটিতে বলা হয়েছে, 'গণপরিবহনে ব্যবহৃত জ্বালানি নির্বিশেষে প্রায় সব বাস ও মিনিবাসে অযৌক্তিকভাবে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে। এতে হঠাৎ যাত্রী সাধারণের যাতায়াত ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।'
রাজধানীতে ভাড়া নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও যাত্রীদের নিয়মিত বচসা ও হাতাহাতির ঘটনায় রাস্তা অবরোধ ও মালিকদের বাস চালনা বন্ধ রাখার ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, 'সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুনঃনির্ধারিত ভাড়া কার্যকর করা না গেলে পরিবহনখাতে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাবে।'
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাংকলরি, প্রাইমমুভারে ভাড়া নির্ধারণের রেওয়াজ না থাকায় মালিকরা নিজেদের সুবিধা মতো ভাড়া বাড়িয়েছে। এতে পণ্য পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে এবং বিভিন্ন পণ্যের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। ইতোমধ্যেই সবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
'গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহনখাতের এই বিশৃঙ্খলায় সাধারণ মানুষের মাঝে অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি, পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সাফল্য প্রশ্নবিদ্ধ এবং সর্বোপরি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে,' উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পর রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণ পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। ডিজেলচালিত বাসগুলোও সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।
এছাড়া, ঢাকা থেকে বিভিন্ন দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী হানিফ, শ্যামলী ও এনা পরিবহনসহ বিভিন্ন কোম্পানিও যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে সর্বনিম্ন ১৪ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৭২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর, এবং বেনাপোল স্থলবন্দরসহ প্রধান প্রধান বন্দরগুলো থেকে ঢাকামুখী ট্রাকের ভাড়া বৃদ্ধির তথ্য বিশ্লেষণ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, 'গড়ে প্রতিকেজি পণ্য পরিবহন ব্যয় ৭০ পয়সা বাড়লেও ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাতে পণ্য সামগ্রীর মূল্য ইতোমধ্যে পণ্যভেদে কেজিপ্রতি ৩ টাকা থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে' বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সমন্বয় করে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ট্যাংকলরিসহ প্রাইমমুভারের ভাড়া বিআরটিএ নির্ধারণ করতে পারে বলে মত দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করে তা কার্যকর করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করার সুপারিশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এছাড়া, এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বিআরটিএ বাৎসরিক চুক্তিভিত্তিক পণ্য পরিবহন ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করে দেওয়ার পক্ষেও মত দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাদেশে ৭৮ হাজার বাসের মধ্যে গ্যাসচালিত ৪৬,৮০০টি, যা মোট বাসের ৬০ শতাংশ। এর মধ্যে ঢাকার অভ্যন্তরে চলাচলকারী ১২,৫২৬টি বাসের মধ্যে ১১,৯০০টি বা ৯৫ শতাংশই গ্যাস চালিত।
ঢাকায় মাত্র ৬২৬টি বাস ডিজেলচালিত হলেও গত ৩ নভেম্বর সরকার ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পর গ্যাসচালিত বাসগুলোও চলাচল বন্ধ রেখে রাজধানীকে গণপরিবহন শুন্য করে ফেলে, যাতে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'মালিকদের দৈনিক জমার টাকা, রাস্তায় বিভিন্ন পয়েন্টে দেওয়া চাঁদা এবং চালক, কন্ট্রাক্টর ও হেল্পারদের দৈনিক আয় তুলতে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রবণতা দেখা যায়।'
'অপরদিকে, মালিক সমিতি, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়মিত মাসোহারা দিতে গিয়ে মালিকপক্ষকেও তার আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করতে হয়। পরিবহন সেক্টরের এই দুরবস্থা শুধু ঢাকা মহানগরীতেই নয়, দেশের প্রায় সকল মহানগর ও জেলাতেও বিদ্যমান'- বলা হয় এতে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক বলেন, পরিবহন খাতের বর্তমান নেতৃত্ব জনগণকে জিম্মি করে সরকারের কাছ থেকে নানাভাবে ফায়দা লুটছে। তাঁরা রাজধানীর বাসে বারবার ঘোষণা দিয়েও সিটিং সার্ভিসের ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ না করে এসব গাড়িতে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তিন থেকে চার গুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। এই খাতে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকের নেতৃত্বে পরিবর্তন জরুরি।
বিআরটিএর মুখপাত্র মাহবুব এ রব্বানী বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ঢাকার মধ্যে ভাড়া বেশি নেওয়ার ব্যাপারটা আমরা জানি। এজন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। আজও নয়টি ভ্রাম্যমাণ আদালত ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছেন। যতোদিন পুনঃনির্ধারিত ভাড়া কার্যকর না হয়, ততোদিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।
তবে দূরপাল্লার বাসে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ সব ক্ষেত্রে সঠিক নয় দাবি করে তিনি বলেন, অনেকেই কিলোমিটার হিসেবে ভাড়া হিসাব করে থাকে। বিভিন্ন রুটের ভাড়ার সঙ্গে টোল, ফেরি ভাড়া যুক্ত থাকে। তাছাড়া, দূরপাল্লার বাসগুলো ৫২ সিটের হয়ে থাকে। সেটা কমিয়ে ৪০ সিট করা হয়। ফলে ওখানেও ভাড়া কিছুটা বেড়ে যায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিবেদনটি আমরা এখনো আমি পাইনি। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তো ভুল করার কথা নয়। অবশ্য অনিয়ম রোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আছে। রবিবার এ বিষয়ে আমাদের একটি সভা রয়েছে।
ঢাকায় গ্যাসচালিত বাসভাড়া বেড়েছে বেশি
ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির আগে জ্বালানি নির্বিশেষে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের বাস ভাড়া ছিল প্রতি কিলোমিটার ১.৭০ টাকা এবং মিনিবাসে ভাড়া ছিল ১.৬০ টাকা। ওই সময় বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৭ টাকা ও মিনিবাসে ৫ টাকা।
৩ নভেম্বর ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর গ্যাসচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া অপরিবর্তিত রেখে শুধু ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া বাড়িয়ে কিলোমিটার প্রতি ২.১৫ টাকা ও ২.০৫ টাকা করা হয়। একই সঙ্গে বাস ও মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ১০ টাকা ও ৮ টাকা।
অর্থাৎ, ঢাকার গ্যাসচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া বাড়ার কোন কারণ না থাকলেও বিভিন্ন পরিবহন ভাড়া আদায় করছে ২০০ শতাংশেরও বেশি।
রাজধানীর উত্তর বাড্ডা থেকে রামপুরা বাজারের দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। এই রুটে গ্যাস চালিত তুরাগ পরিবহনের মিনিবাসগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছে ১৫ টাকা। অথচ সরকার নির্ধারিত প্রতি কিলোমিটার ১.৭০ পয়সা হারে এই দূরত্বে ভাড়া হওয়ার কথা ৫ টাকা। অর্থাৎ, তুরাগ পরিবহন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে প্রায় ২০০ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
একইভাবে গুলিস্তান থেকে বাড্ডার ৭ কিলোমিটার দূরত্বে প্রকৃত ভাড়ার পরিমাণ ২৬ টাকার বদলে ভিক্টর পরিবহনের বাসগুলো আদায় করছে ৫০ টাকা, যা প্রায় ৯২ শতাংশের বেশি। গুলিস্তান-মিরপুরের ১৮ কিলোমিটার দূরত্বে বিহঙ্গ পরিবহনও ৩১ টাকার বদলে আদায় করছে ৫০ টাকা।
গুলিস্তান থেকে হযরত শাহজালাল (রহ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। এই রুটে চলাচলকারী প্রভাতী পরিবহনের বাসগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ৩০ টাকার অতিরিক্ত ২০ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।
মিরপুর-১২ থেকে গুলশান-১ রুটে চলাচলকারী বাসগুলোও ১৩ কিলোমিটারে ২৩ টাকার বদলে ৪০ টাকা ভাড়া আদায় করছে। অর্থাৎ, যাত্রীরা অতিরিক্ত ৭৪ শতাংশ ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছে।
একইভাবে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জের মধ্যে চলাচলকারী গ্যাসচালিত বাস ও মিনিবাসের প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নেওয়ার কথা ১.৬০ টাকা, কিন্তু তারাও তা মানছে না। ১৫ কিলোমিটারের গুলিস্তান-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী গ্যাসচালিত বন্ধন ও উৎসব পরিবহনের বাসভাড়া ৩১ টাকার বদলে ৫০ টাকা করে আদায় হচ্ছে।
ডিজেলের মূল্য ২৩ শতাংশের বৃদ্ধির পর পরিবহন মালিকদের সঙ্গে সভা করে বাসের ভাড়া ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি করলেও ঢাকার ডিজেলচালিত বাসগুলোও সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রাজধানীর মালিবাগ থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ১৭.৫ কিলোমিটার দূরত্বে ২.১৫ টাকা হারে ভাড়া হওয়ার কথা ৩৮ টাকা, কিন্তু এই রুটে চলাচলকারী বলাকা পরিবহন যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করছে ৪৫ টাকা।
একইভাবে গুলিস্তান টু সাতরাস্তা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটারে ২৬ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে আজমেরী পরিবহন, যা নির্ধারিত ভাড়ার তুলনায় ৪.৫০ টাকা বেশি।
সদরঘাট-আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ২২.১ কিলোমিটারে ৫০ টাকা ভাড়া আদায় করছে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহন, যদিও ভাড়া নেওয়ার কথা ৪৭.৫০ টাকা।
দূরপাল্লায় বাড়তি ভাড়া ১৪-৭২ শতাংশ
ঢাকা-কুমিল্লা রুটের দূরত্ব ৯৫ কিলোমিটার। দূরপাল্লার রুটে ডিজেলচালিত বাসের প্রতি কিলোমিটার ভাড়া বিআরটিএ নির্ধারণ করে রয়েছে ১.৮০ টাকা। এ হিসাবে বাসগুলোতে যাত্রীপ্রতি ১৭৫ টাকা ভাড়া হওয়ার কথা থাকলেও এ রুটে চলাচলকারী তিশা, এশিয়া লাইন ও এশিয়া ট্রান্সপোর্টের বাসগুলো ভাড়া আদায় করছে ২৫০-৩০০ টাকা। অর্থাৎ, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার ৪৩-৭২ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে বাসগুলো।
একইভাবে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে নিয়মিত চলাচলকারী হানিফ, শ্যামলী ও এনা পরিবহনের বাসগুলো ভাড়া নিচ্ছে ৯৫০-১০০০ টাকা। ৩৯৬ কিলোমিটার দূরত্বের এ রুটে সরকারের রেট অনুযায়ী ভাড়া হওয়ার কথা ৭১৫ টাকা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২৪২ কিলোমিটার দূরত্বের ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ৪৪০ টাকা ভাড়া নেওয়ার কথা থাকলেও পরিবহন কোম্পানিগুলো আদায় করছে ৫৮০ টাকা করে।
২৫০ কিলোমিটার দূরত্বের ঢাকা-যশোর রুটে চলাচলকারী মামুন এন্টারপ্রাইজ ভাড়া আদায় করছে ৭০০ টাকা করে, অথচ সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়া নেওয়ার কথা ৪৫০ টাকা। অর্থাৎ, কোম্পানিটি ৫৬ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে যাত্রীদের কাছ থেকেই।
একইভাবে ঢাকা-ঝিনাইদহ রুটের দর্শনা ডিলাক্স যাত্রীদের কাছ থেকে ৩৭০ টাকার বদলে ৬০০ টাকা নিচ্ছে, অর্থাৎ, যাত্রীপ্রতি ২৩০ টাকা বাড়তি আদায় করছে কোম্পানিটি।
কোন নির্দিষ্ট যাত্রাপথে বাস বা মিনিবাস কোন ধরণের জ্বালানি ব্যবহার করছে তা মনিটরিং এবং সে অনুযায়ী ভাড়া আদায় করছে কি-না, তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ঢাকা-চট্টগ্রামে প্রতিকেজি পণ্য পরিবহন ব্যয় বেড়েছে ১.৪০ টাকা
বিআরটিএ বা সরকারের অন্য কোন সংস্থা ট্রাকের ভাড়া নির্ধারণ করে না। ফলে ট্রাক মালিকরা নিজেদের ইচ্ছামত ভাড়া নির্ধারণ করে থাকে, যার ব্যতিক্রম হয়নি এবার ডিজেলের দাম বাড়ার পরও।
ডিজেলের মূল্য বাড়ার পর বাস ও লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে অঘোষিত ধর্মঘট পালন করে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ট্যাংকলরি ও প্রাইমমুভারগুলো।
পণ্য পরিবহন ভাড়া যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সঙ্গে পরিবহন মালিকদের সভা হলেও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত ছাড়াই তা শেষ হয়েছে।
গত ৮ নভেম্বর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর মালিকরা নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়িয়ে নিয়েছে।
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত ৫ টনের একটি ট্রাকের ভাড়া আগে ছিল ১৩ হাজার টাকা, যা এখন ৫৪ শতাংশ বেড়ে ২০ হাজার টাকা হয়েছে। ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পর এই রুটে প্রতি কেজি পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়েছে ১.৪০ টাকা।
দেশের প্রধান স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল থেকে ৫ টনের একটি ট্রাকের ঢাকা পর্যন্ত ভাড়া আগে ছিল ১৯ হাজার টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ২৩ হাজার টাকা। ট্রাক ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়লেও এ রুটে প্রতিকেজি পণ্য পরিবহন ব্যয় বেড়েছে ৮০ পয়সা
রাজধানীতে সবজির বড় যোগান দেয় উত্তরবঙ্গের জেলা বগুড়া। ডিজেলের দাম বাড়ার আগে ঢাকা-বগুড়ায় পাঁচ টনের ট্রাক ভাড়া ছিল ১২,৫০০ টাকা যা এখন ১৬,০০০ হয়েছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয় টেকনাফ স্থলবন্দর নিয়ে। ঢাকা-টেকনাফ রুটে আগে ১৩ টনের ট্রাক ভাড়া ছিল ৩৯ হাজার টাকা, যা এখন ৪৪ হাজারে উন্নীত হয়েছে।
ঢাকা-সিলেট রুটে পণ্য পরিবহন ব্যয় প্রতিকেজিতে ১ টাকা বেড়েছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এ রুটে আগে ৫ টনের ট্রাক ভাড়া ছিল ১২ হাজার টাকা, যা এখন ১৭ হাজার হয়েছে।