সড়কে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন
আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর রামপুরা ব্রিজে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তাদের বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় সড়কের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করেন তারা।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে শোক জানাতে আগামীকাল একই সময় কালো ব্যাজ ও মুখে কালো কাপড় বেঁধে আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আগামীকালের কর্মসূচি ঘোষণা করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে এসব বলেন খিলগাঁও মডেল কলেজের সোহাগী সামিয়া।
শিক্ষার্থীদের ব্যঙ্গচিত্রে দেখা গেছে, বাসের ছবি মাঝে রেখে পাশ থেকে একজন বলছে, মা আজ রাতে ঘরে ফিরবো না; অন্যপাশে অনাবিল বাস।
আরেকটি ব্যঙ্গচিত্রে দেখা গেছে, বাস মালিক প্রশাসনের গলায় দড়ি বেঁধে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন। ওপাশ থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে যাচ্ছে, "আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই।"
আরও দেখা যায়, ব্যঙ্গচিত্রে একজন শিক্ষার্থী ন্যায়বিচারের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। আর অন্যপ্রান্ত থেকে পুলিশ বলছে, "আয়রে তোকে জাস্টিস দেই। আমার মাথার ওপর কাহার হাত জানিস?"
পাশাপাশি অন্য একটি চিত্রে দেখা যায়, বাস মালিক এসে সরকারকে ভক্তি করছেন। পাশ থেকে পুলিশ বলছে, "কিছু দেখি নাই, কিছু শুনি নাই, কিছু বুঝি নাই, কিছু বলি নাই।"
এছাড়াও বিভিন্ন পোস্টারে 'আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে', 'রক্তাক্ত শিক্ষার্থী দেহের সাথে সাথে নিথর সব স্বপ্ন', 'দেশমাতৃকা তোমার গর্ভের আশ্রয়স্থলেও মোরা নিরাপদ নই', 'আমি মরলেও ক্ষতি নাই, নাঈম, মাঈনুদ্দিন হত্যার বিচার চাই', 'মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় পরিবহন সন্ত্রাসের ঠাঁই নাই' ইত্যাদি লেখা ছিলো।
এছাড়াও শিক্ষার্থীরা শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত প্রতীকি লাশের মিছিল বের করে।
এসময় স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইনজামুল হক জানান, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আগামীকাল সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও প্রতিবাদী গানের আসরের আয়োজন করা হবে।
পরশুদিন একটা সাইকেল র্যালি করার পরিকল্পনাও আছে তাদের।
এছাড়া শাহবাগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে সামাজিক সংগঠন 'ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ'।
সংগঠনটির সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবক এমএইচ অনিক বলেন, "আমরা নিরপেক্ষভাবে সবাইকে সচেতন করতে চাই। সড়ক অবরোধ না করে বিভিন্ন সচেতনামূলক বাণী ছড়িয়ে দিতে চাই। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আমরা বাসের চালক ও যাত্রীদের সাথে কথা বলব।"
২৪ নভেম্বর সিটি কর্পোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন রাজধানীর নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান।
তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সেদিনই ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদেরকে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ চাই না, নিরাপদ বাংলাদেশ চাই' লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে দেখা যায়। এছাড়া, 'রক্তের কি দাম নেই?', 'আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে?', 'যদি তুমি চুপ থাকো তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ'- লেখা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ঢাকার মহাসড়ক।
এ ঘটনার সপ্তাহ না পেরোতেই ২৯ নভেম্বর রাতে অনাবিল পরিবহনের একটি বাসের নিচে পিষ্ট হয়ে রামপুরা বাজার সংলগ্ন সড়কে নিহত হয় একরামুন্নেসা স্কুলের শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিন। ঘটনার রাতেই বিক্ষুব্ধ জনতা রামপুরা এলাকায় অন্তত ৮টি বাসে অগ্নিসংযোগ করে। মাইনুদ্দিনের মৃত্যুতে চলমান এই আন্দোলন আরও জোরদার হয়।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন আদতে ২০১৮ সালের আন্দোলনেরই পুনরাবৃত্তি। সে বছর বাস চাপায় রাজধানীর রমিজউদ্দীন কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতেও দেশজুড়ে চলে বিক্ষোভ আন্দোলন।