১০ ঘণ্টা পর পুলিশের সহযোগিতায় মুক্ত হলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অবরুদ্ধ শিক্ষক-কর্মকর্তারা
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ভবনে রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, শিক্ষকসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ ৩৪জনকে অবরুদ্ধ করে রাখার ১০ ঘণ্টা পর পুলিশের সহযোগিতায় তারা মুক্ত হয়েছেন।
গতকাল রাত ২টার দিকে তারা মুক্ত হন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানিয়েছেন। এর আগে বিকেল ৪টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে ভবনের গেটে তালা দিয়ে ভেতরে তাদের অবরুদ্ধ করে রেখে ছাত্ররা সামনে অবস্থান নেয়। এ অবস্থায় গভীর রাতে কয়েকজন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্যরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। এরপরই পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
শাহজাদপুর থানার এসআই রুবেল হোসেন বলেন, সংবাদ পেয়ে রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৌঁছেন তিনি। এরপর উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে অবরুদ্ধ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে রওশন আলম জানান, "তিন নারী শিক্ষকসহ অবৈধভাবে তারা আমাদের অবরুদ্ধ করেছিল। সঙ্গে থাকা তিন জন নারী শিক্ষককে ছেড়ে দিতে অনেক অনুরোধ করা হয়েছিল, কারণ তাদের ঘরে ছোট বাচ্চা আছে। কিন্তু তারা এ মানবিক অনুরোধও রাখেনি।"
তিনি আরও বলেন, "বেশ কয়েকজন ছাত্র শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলেছে এবং রেজিস্ট্রার স্যারকে তুই তুকারি করে কথা বলেছে। এ রকম মানুষ আমাদের ছাত্র হতে পারে না এবং আমরাও তাদের শিক্ষক হওয়ার যোগ্য নই।"
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোঃ সোহরাব আলী বলেন, "আমরা সিদ্বান্ত নিয়েছি, আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সংকট কাটিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা বাতেনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমি এসেছিলাম ভিসি মহোদয়ের এই সিদ্ধান্ত তাদের জানাতে। কিন্তু তারা আমার কথার কোনো কর্ণপাত করেনি। একপর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রী ড. দিপু মনি মহোদয় তাদের সাথে মোবাইলে কথা বলার জন্য যুক্ত হয়েছিলেন, কিন্ত তারা তার সাথেও কথা বলতে রাজি হয়নি। তারা অন্যাভাবে আমাদের একাডেমিক ভবনে প্রায় ১০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখেছিল।"
এ বিষয়ে জানতে একাধিক শিক্ষার্থীর মোবাইলে ফোন দিলেও তারা ফোন ধরেনি। জানা গেছে আজ কোনো শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নেয়নি বা ক্যাম্পাস এলাকায় কোনো কর্মসূচি চলছে না।
প্রসঙ্গত, ২৬ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের ১৬ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেয়ার অভিযোগ উঠে ওই বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের বিরুদ্ধে। অপমান সহ্য করতে না পেরে এক ছাত্র অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করেন ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। ঘটনার তদন্তে গঠন করা হয় ৫ সদস্যের কমিটি। এরপর সিন্ডিকেট সভা শেষে শিক্ষিকা ফারহানাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এ অবস্থায় চুলকাটার একটি ভিডিও ভাইরাল হলে আন্দোলন আরও তীব্র হয়। একপর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে যান শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব আলীর কাছে প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটি। এরপর শুক্রবার বিকেলে ঢাকায় সিন্ডিকেট সভা হয়। আরও কিছু তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ বাকি রয়েছে জানিয়ে সিন্ডিকেট সভা মুলতবি করা হয়। সেদিন রাত থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে আবারও আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
এরপর শনিবার গভীর রাতে ফেসবুক লাইভে এসে শিক্ষার্থী শামিম ঘোষণা দেন, অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোন সিদ্বান্তে পৌঁছাতে না পারলে রোববার বেলা ১২টার পর আত্মহত্যা করবে। সেই মোতাবেক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে একাডেমিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুইজন পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আত্মহত্যার চেষ্টায় কীটনাশক পান ও ব্লেড দিয়ে হাত কাটেন।
এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সিরাজগঞ্জ-নগরবাড়ি মহাসড়কের বিসিক মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন। এ অবস্থায় মহাসড়কের দুপাশে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। ঘণ্টাখানেক পর অবরোধ তুলে নেন তারা। এরপর আবারও ক্যাম্পাসে ফিরে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন।