১১ বছরে প্রায় ১৫শ’ কোটি টাকার প্রকল্প, তবু জলাবদ্ধতার শেষ নেই
গত ১১ বছরে সিলেট নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, ছড়া উদ্ধার ও সংস্কারের জন্য প্রায় ১৫শ' কোটি টাকার ৪টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ, গত বছরের ডিসেম্বরেই সিলেট সিটি করপোরেশনকে এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।
১১ বছরে এতগুলো প্রকল্প, এত টাকা ব্যয়ের পরও জলাবদ্ধতা থেকে সিলেট নগরবাসীর মুক্তি ঘটেনি।
সোমবার রাতের বৃষ্টিতেও জলমগ্ন হয়ে পড়ে নগরীর অনেক এলাকা। রাস্তা তো আছেই, বাসা-বাড়িতেও ঢুকে পড়ে পানি। এতে চরম দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
গত কয়েকদিন ধরেই বৃষ্টিতে নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
জলবদ্ধতা প্রশ্নে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহমান সুরমা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। নদী খনন না হওয়ায় বৃষ্টির পানি নদী দিয়ে যেতে পারে না। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
নগরীর ভেতর দিয়ে সুরমা নদী ছাড়াও প্রবাহিত হয়েছে ছোট বড় ১৪টি ছড়া ও খাল। মূলত প্রভাবশালীরা ছড়া ও খালগুলো দখল করে রাখায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার ঘটনা ঘটে।
৭২ কিলোমিটারের এসব ছড়া খাল উদ্ধার, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্যে গত ১১ বছরে নেওয়া হয় চারটি প্রকল্প। ২০০৯ সালে নগরীর ছড়াগুলো উদ্ধারে ১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সিলেট সিটি করপোরেশন। এরপর ২০১৩ সালে একই লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয় ২০ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প।
এরপর ২০১৬ সালে নেওয়া হয় ২৩৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার প্রকল্প। এরমধ্যে এই তিনটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। গত ডিসেম্বরে অনুমোদন মিলেছে ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প।
এত প্রকল্প সত্ত্বেও জলবদ্ধতার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নগরীর নগরীর মিরাবাজার, শিবগঞ্জ, কানিশাইল, উপশহর, তেররতন, সুবিদবাজার, জামতলা, তালতলা এলাকাসসহ বেশ কিছু এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। সড়ক উপচে এসব এলাকার বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়ে বৃষ্টিতে।
নগরীর লামাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আনিস মাহমুদের বাসায়। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে রাস্তায় কোমর পর্যন্ত পানি জমে ছিল। আর আমার বাসায় ছিল হাঁটুপানি। বৃষ্টি হলেই এই এলাকায় পানি ওঠে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে এত প্রকল্পের বাস্তবায়ন সত্ত্বেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, নগরীর কিছু কিছু নিচু এলাকা প্রতি বছরই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বর্ষাকালে অতিবৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে এমনটি হচ্ছে। তবে আগে যেমন অল্পবৃষ্টিতেই পুরো নগরজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো এবং সহজে এই পানি নামতো এখন তেমনটি হচ্ছে না।
নগরবাসীর জলবদ্ধতার দুর্ভোগ লাঘবে আমাদের বেশ কিছু কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিটি এলাকায় গভীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও বিভিন্ন খাল ও ছড়া উদ্ধার করে সেগুলোকে পরিষ্কার করে পানির নিষ্কাশন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে সিটি করপোরেশন কাজ করে যাচ্ছে। এসব কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে যাবে।
সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সুরমা নদী খনন করা প্রয়োজন।