'ক্রসফায়ার’ : ওসি প্রদীপসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে আরো একটি হত্যার অভিযোগ
৫ লাখ টাকা আদায় করে দাকিকৃত আরো ৫ লাখ টাকা না দেওয়ায়- টেকনাফের প্রবাসী মাহামুদুল হক 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহতের ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড অভিযোগ এনে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে এজাহার দায়ের করা হয়েছে।
আদালত এজাহারটি পর্যালোচনা করে 'বন্দুকযুদ্ধে' মাহামুদুল হক নিহতের ঘটনায় টেকনাফ থানায় দায়ের করা মামলার বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন।
আজ বুধবার (২৬ আগস্ট) বেলা ৩টায় জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (টেকনাফ-৩) মো. হেলাল উদ্দিন এর আদালত আদেশটি দেন। অভিযুক্তদের মধ্যে ওসি প্রদীপসহ ১৬ জন পুলিশের সদস্য। অন্যান্যরা চৌকিদারসহ স্থানীয় প্রভাবশালী।
টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার এলাকার মিয়া হোসেনের ছেলে নুরুল হোছাইন (৪৫) বাদি হয়ে এই এজাহারটি দায়ের করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন, টেকনাফ থানার এসআই দিপক বিশ্বাস, ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই জামসেদ আহমদ, ওসি তদন্ত এবিএমএস দোহা, এসআই দীপংকর কর্মকার, এএসআই হিল্লোল বড়ুয়া, এএসআই ফরহাদ হোসেন, এএসআই আমির হোসেন, এএসআই সনজিৎ দত্ত, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, কনস্টেবল সাগর দেব, ড্রাইভার জহির, কনস্টেবল হৃদয়, ব্যাটালিয়ন কনস্টেবল সৈকত, ব্যাটালিয়ন কনস্টেবল প্রসেনজিৎ, ব্যাটালিয়ন কনস্টেবল উদয়, হ্নীল সিকদার পাড়ার মৃত মোস্তফা কামালের ছেলে নুরুল আমিন প্রকাশ নুরুল্লাহ দফাদার, একই এলাকার মৃত আবু শামার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, নাটমুরা পাড়ার নজির আহমদের ছেলে নুরুল হোছাইন, সিকদার পাড়ার আলোর ছেলে ভূট্টো, মৃত তোফায়েল আহমদের ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম ননাইয়া, পূর্ব পানখালীর আবুল হাশেমের ছেলে নুরুল আলম, মৃত নবী হোসেনের ছেলে নুরুল আমিন।
বাদি নুরুল হোছাইন এজাহারে উল্লেখ করেছেন, তার শিক্ষিত ছোট ভাই মাহামুদুল হক প্রবাস ফেরত। সে এলাকায় আসার পর দফাদার নুরুল্লাহ পুলিশকে দিয়ে তার ভাইয়ের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করায়। এ টাকা না দেয়ায় ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ তার ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ছেড়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিলেও, গত ৩১ মার্চ তার ভাইকে এলাকার একটি লবণ মাঠ ঘেরের কাছে হত্যা করা হয়।
বাদির আইনজীবী মো. কাসেম আলী জানান, এজাহারটি পর্যালোচনা করে আদালত আগামী ৭ সেপ্টেম্বর বন্দুকযুদ্ধ সংক্রান্ত টেকনাফ থানায় দায়ের করার মামলার বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করতে আদেশ দিয়েছেন।
বাদি নুরুল হোছাইন জানান, তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোন সময় কোনও মামলা ছিলনা। পরিকল্পিতভাবে তার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর থেকে পুলিশের পক্ষে ধারাবাহিক হুমকি প্রদান করা হয়। নিরাপত্তার কারণে এতদিন মামলা করার সুযোগ ছিল না। এখন সুযোগ হয়েছে তাই মামলা করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ। এ ঘটনায় টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই মামলায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যকেও যুক্ত করা হয়েছে। তারা সকলে কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছেন।
প্রথমে আসামীদের ৭ দিনের রিমান্ড আদেশ এবং পরে আরো ৪দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। এটি দেখেই কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় নানা ভাবে হয়রান ও নিপীড়নের শিকার ভুক্তভোগীরা পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে উদ্যোগী হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় কথিত ক্রসফায়ারে প্রবাসী মাহমুদুল হককে খুন করা হয়েছে দাবি করে বুধবার তার ভাই মামলা করেছেন।
এর আগে সাজানো ক্রসফায়ারে হোয়াইকংয়ের সাদ্দামকে খুন করার কথা উল্লেখ করে, তার মা মামলার এজাহার দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) উখিয়া থানার ওসিসহ স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক তরুণী।