‘বোরকা পরে নৌকায় চড়ে পালিয়ে যাচ্ছিলো সাহেদ’
করোনার টেস্ট নিয়ে প্রতারণার মামলার আসামি রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ বোরকা পরে নৌকায় করে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে র্যাব।
গ্রেপ্তারের পর ঢাকায় আনার আগে সকাল ৮টায় সাতক্ষীরা জেলা স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানান, র্যাবের এডিজি কর্নেল তোফায়েল আহম্মেদ।
তিনি বলেন, "আমরা তার গতিবিধি আগে থেকেই অনুসরণ করছিলাম। ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করছিল সাহেদ। সে সীমান্ত নদী ইছামতি দিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল। সেজন্য দালালদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে। সাহেদকে যেসব দালালরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছে তাদেরকেও আমরা গ্রেফতার করবো। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি নৌকা ভাড়া করেছিল সে। গ্রেফতারের সময় নৌকা চালক সাতরে পালিয়ে যায়। সাহেদ মোটা মানুষ হওয়ায় সে হয়তো দৌঁড়াতে পারেনি।"
বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সাতক্ষীরার দেবহাটা থানার সাকড় বাজারের পাশে অবস্থিত লবঙ্গপতি এলাকা থেকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে একটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয় বলে তারা জানায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম জানান, তাদের মসজিদে ফজরের নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই তাদের কানে চিৎকার ভেসে আসতে থাকে। শুরু হয় হৈ চৈ। ঘটনা কি ঘটেছে দেখার জন্য দৌঁড়ে যান সকলেই। গিয়ে দেখেন সারাদেশের আলোচিত প্রতারক সাহেদ করিমকে তাদের এলাকায় এসে ধরে ফেলেছে র্যাব।
তিনি বলেন, "আমরা যখন নামাজ শেষ করেছি সেই মুহূর্তেই তিনটি র্যাবের গাড়ি খুব গতিতে চলে গেল। ২-৩ মিনিট পরই আওয়াজ আসতে লাগলো আল্লাহু আকবার, ধরে ফেলেছি, ধরে ফেলেছি। আমিসহ মসজিদের মুসল্লিরা ও এলাকার বাসিন্দারা দৌঁড়ে ঘটনাস্থলে আসে কি ঘটেছে দেখার জন্য। দৌঁড়ে দিয়ে দেখি, বর্তমানের আলোচিত প্রতারক সাহেদ করিমকে ধরে ফেলেছে র্যাব। হাতে হাতকড়া পরাচ্ছে তখন। কাছে একটি পিস্তলও পেয়েছে।"
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ বলেন, "প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাসের জন্য তাকে ঢাকায় র্যাবের প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।"
কোভিড-১৯ এর পরীক্ষার নামে ভূয়া প্রতিবেদন প্রদান ও বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগে গত ৭ জুলাই র্যাব অভিযান চালিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের প্রধান কার্যালয় এবং উত্তরা ও মিরপুরে তাদের দুটি শাখা বন্ধ করে দেয়।
র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, মহামারি শুরুর পর থেকে রিজেন্ট হাসপাতাল অন্তত ২০ হাজার মানুষের কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করেছে যার মধ্যে ৪ হাজার ২০০টি ছাড়া বাকী সবগুলোর ক্ষেত্রেই টেস্ট না করেই ভূয়া ফলাফল দেওয়া হয়।
বিনামূল্যে করোনার পরীক্ষা ও চিকিৎসার বিষয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চুক্তি হলেও তারা শুরু রোগীদের কাছ থেকেই টাকা নিতো না পাশাপাশি প্রত্যেক রোগীর চিকিৎসার বিপরীতে মন্ত্রণালয়কে বিল ধরিয়ে দিতো।
প্রতারণা আর সরকারের সঙ্গে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে সাহেদ সহ রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের ১৬ জনকে আসামী করে ৭ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করে র্যাব। তখন থেকেই আত্মগোপনে যান মামলার প্রধান আসামী সাহেদ।