অধ্যক্ষকে হেনস্তাকারী রনির ছাত্রত্ব বাতিলের উদ্যোগ
নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত রহমত উল্লাহ রনির ছাত্রত্ব বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রনি খুলনার সরকারি বিএল কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র। ওই কলেজের স্নাতক শাখা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত হওয়ায়, রনিও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লেখাপড়া করছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শরীফ আতিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, 'আগামীকাল (০৩ জুলাই) আমাদের কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হবে। সেই সভায় রনির ছাত্রত্ব বাতিলের ব্যাপারে আলোচনা করা হবে।'
'যেহেতু সে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাই সভার পর আমরা একটি চিঠি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাব। আমরা সরাসরি কোন ছাত্রকে বহিস্কার করতে পারি না। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে সিদ্ধান্ত জানাতে পারি। তার ছাত্রত্ব বাতিলের ব্যাপারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে।'
ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থীর পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন দিনভর নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, সহিংসতা চলে।
গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।
এরপর পুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি।
শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।
মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পুলিশের সামনে শিক্ষকের এমন অপদস্থ হওয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সারাদেশে।
কলেজে হামলা ও শিক্ষক হেনস্তার ঘটনার ৯ দিন পরে গত ২৭ জুন দুপুরে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন পুলিশের উপপরিদর্শক ও মির্জাপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মোরছালিন।
দণ্ডবিধির ৩৪, ১৪৩, ৪৪৭, ৪৪৮, ৩২৩, ৩৪১, ৩৩২, ৩৫৩, ৩৫৫, ৪৩৬, ৪২৭, ৫০০ ধারায় করা এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০-১৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সেই মামলায় গত বুধবার (২৯ জুন) দুপুরে খুলনা বিএল কলেজ এলাকা থেকে রনিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
নড়াইল সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহমুদুর রহমান জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে সরাসরি অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিতে দেখা গেছে রহমত উল্লাহ রনিকে।
তিনি জানান, এ মামলায় এ পর্যন্ত মোট চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি তিন জন হলেন- মির্জাপুরের শাওন খান, মধ্যপাড়ার মো. মনিরুল ইসলাম এবং সৈয়দ রিমন আলী। তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, 'তাদের প্রত্যকে ৫ দিনের জন্য রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল (৩ জুলাই) তাদের রিমান্ড শুনানীর দিন ধার্য করা হয়েছে।'