কোভিড-১৯: সংক্রমণ বাড়লেও তীব্রতা কম, বেড়েছে মৃত্যু
করোনায় সংক্রমণের সঙ্গে মৃত্যু বাড়ছে। দেশে গত এক সপ্তাহে আগের সপ্তাহের তুলনায় নতুন রোগী শনাক্ত বেড়েছে ৫২.৮% আর মৃত্যু বেড়েছে ১৪৪.৪%। অমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্টের কারণে দেশে করোনাভাইরাসের চতুর্থ ওয়েভে সংক্রমণ দ্রুত ছড়ালেও আগের ওয়েভগুলোর তুলনায় সিভিয়ারিটি (তীব্রতা) কম। মৃত্যু কমাতে কোমর্বিড (ডায়বেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ, হাইপরটেনশন) ও বয়স্ক রোগীদের ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ ও সেকেন্ড ডোজ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংক্রমণ দ্রুত বাড়লেও এ বছর জুলাইয়ে পরিস্থিতি আগের দুই বছরের জুলাই মাসের মতো খারাপ হবে না মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, দেশের ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ পূর্ণ দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী বলেন, "এখন কোভিড অনেকটা ফ্লুর মত। হাসপাতাল বা চেম্বারে কোভিড-১৯ এর যে রোগীরা আসছে, তারা জ্বর, মাথা ব্যথা, সর্দি, শরীর ব্যাথা, গলা ব্যথা নিয়ে আসছে। সিভিয়ার পেশেন্ট পাওয়া যাচ্ছে তবে আগের তিন ওয়েভের তুলনায় অনেক কম। বয়স্ক ও বিভিন্ন ধরণের কোমর্বিডিটিতে ভুগছেন যারা, তারাই মূলত সিভিয়ার হচ্ছেন।"
আগের ওয়েভগুলোতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে অক্সিজেনের চাপ অনেক বেশি ছিলো। তবে এখন সব হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন আছে, ভ্যাকসিনেশনের কারণে সিভিয়ারিটি কমে আসছে। তাই কয়েকজনের যে অক্সিজেন লাগছে তার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ পড়ছেনা বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রামে কোভিড রোগী বেশি বাড়ছে। তবে রোগী বাড়লেও হাসপাতালে রোগী ভর্তির হার কম। সারাদেশে কোভিড রোগীদের জন্য নির্ধারিত ১২,৯৯৯টি জেনারেল বেডে রোগী ভর্তি আছে ১৭৩ জন ও ১,১৮১ আইসিইউ বেডের মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ৯৬ জন।
চিকিৎসকেরা জানান, সিভিয়ারিটি কম হওয়ায় অনেকেই কোভিড টেস্ট করছে না। হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি নন-কোভিড ট্রিটমেন্ট নিতে যাওয়া রোগীদের লক্ষণ দেখা দিলে তাদের কোভিড টেস্ট করে পজিটিভ পেলে কোভিড ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে। রোগীর চাপে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি এবারের ওয়েভে হয়নি।
এদিকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট ডা. সমন অনিরুদ্ধ টিবিএসকে বলেন, "এবারের ওয়েভে সিভিয়ারিটি কম, তাই আগের মত আইসিইউয়ের জন্য রোগীর চাপ নেই। মুগদা মেডিকেলে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের ট্রিটমেন্ট করা হচ্ছে। তবে সিভিয়ার রোগী না হওয়ায় এখনো কোভিড আইসিইউ চালু করা হয়নি।"
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. এম মুশতাক হোসেন টিবিএসকে বলেন, "এখন পর্যন্ত যারা সুস্থ আছে তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া যাবে না। কারণ কোভিডে মৃদু সংক্রমণে ভোগান্তি কম হলেও কোভিড-পরবর্তী জটিলতা অনেক বেশি। সংক্রমণ মোকাবেলায় মাস্ক পরা, জায়গায় ভিড় না করা ও ভ্যাকসিনের সেকেন্ড ও বুস্টার ডোজ নিতে হবে।"
গত ২৭ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত কোভিডে মারা যাওয়া ২২ জনের মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়েছিল ১৬ জন, ভ্যাকসিন নেয়নি ৬ জন। মৃতদের মধ্যে বুস্টার ডোজ নেয়া ছিলো ৩ জন। আর গত এক সপ্তাহে কোভিডে মারা যাওয়াদের মধ্যে আগের সপ্তাহের তুলনায় কোমর্বিডিটি ৬.১% বেড়েছে।
ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী বলেন, "একজন সুস্থ মানুষের ভ্যাকসিন দেয়ার পরে যেরকম ইমিউনো রেসপন্স হয়, ডায়বেটিস ও অন্য কোমর্বিড কন্ডিশনে একই রকম ইমিউনো রেসপন্স হয় না। ভ্যাকসিন সিভিয়ারিটি কমায়, তবে মৃতের হার শতভাগ কমাবে, তেমন নয়। সে কারণে মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।"