ঈদের বন্ধেও ডায়রিয়া রোগীর চাপ, অধিকাংশই শিশু
দেশে বর্তমানে চলমান তাপদাহের কারণে গত কয়েকদিনে বেড়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাকেন্দ্র রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) বলছে, এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু।
ঈদ-উল-আযহার ছুটিতে রাজধানীর কর্মজীবিদের অনেকেই ঢাকা ছাড়লেও কয়েকদিন ধরে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগী। দাবদাহের কারণে পিপাসা নিবারণে যেখানে সেখানে পানি পান, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের কারণে অনেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা আরো বলছেন, সাধারণত ঈদের ছুটিতে স্বাভাবিক সময়ে এতো রোগী ভর্তি হয় না আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) বিকেল ৩টা পর্যন্ত আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে ১৯৪ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে।
এর আগে বুধবার ৩৯৭জন, মঙ্গলবার ৩৯১জন, সোমবার ৩৭১জন, ঈদের দিন রোববার ২৯০জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়।
তার আগে গত ৯ জুলাই ৩৫৫ জন, ৮ জুলাই ৩৬৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে ভর্তি হয়।
বৃহস্পতিবার আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই ডায়রিয়া রোগী নিয়ে স্বজনরা হাসপাতালে আসছেন। রোগীদের বেশিরভাগই ঢাকার। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু।
এছাড়া হাসপাতালটির আইসিইউতে তিনজন রোগী ভর্তি আছে যারা সবাই ই শিশু।
রাজধানীর মোহাম্মপুরের বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বৃহস্পতিবার সকালে তার ১১মাসের শিশু ইব্রাহিমকে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। গত দুদিন ধরে শিশু ইব্রাহিমের জ্বর এবং পাতলা পায়খানা। স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ খাওয়ালেও তেমন কোনো উন্নতি না হওয়ায় আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
মোশাররফ হোসেন টিবিএসকে বলেন, "গতকাল রাত থেকে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে বাচ্চাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখন জ্বরটা একটু কমেছে কিন্তু পাতলা পায়খানা এখনও আছে। দুদিন ধরে অসুস্থ থাকায় বাচ্চা খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।"
গত কয়েকদিন ধরে অতিরিক্ত গরমের কারণে বার বার ঘাম হওয়ায় এবং ঠান্ডা পানীয় বেশি খাওয়ায় এমনটা হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। তারা ওয়াসার পানি ফুটিয়ে পান করেন বলে উল্লেখ করেন মোশাররফ।
নতুনবাজারের বাসিন্দা সুমাইয়া বেগম বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন তার দেড় বছরের শিশু নুসাইবাকে।
সুমাইয়া টিবিএসকে বলেন, "গত ৭/৮ দিন ধরে আমার মেয়ে অসুস্থ। হাসপাতালে নিয়ে আসার পরে পেটে সমস্যা একটু কমেছে। তবে ও খুব ক্লান্ত। খাবার খেতে চায় না। আমাদের ভবনে আরও এক শিশু অসুস্থ।"
আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে দায়িত্বরত নার্সরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে যে রোগী আসছে তাদের অধিকাংশই শিশু। দেশে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এখন রোগীর চাপ একটু বেশি। সাধারণত ঈদের ছুটিতে ঢাকাতে এতো রোগী দেখা যায় না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরম এলেই ডায়রিয়ার সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এই রোগে বেশি ভুক্তভোগী হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শহরে ট্যাপের পানি সেপটিক ট্যাংক বা সুয়ারেজ লাইনের সংস্পর্শে দূষিত হয়।
অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, যেখানে-সেখানে ও পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ, সঠিক উপায়ে হাত না ধোয়া, অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ এবং ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এ সময় দোকান, রেস্তোরাঁ বা বাসায় পচন ধরা ফ্রিজের খাবার গ্রহণ ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে আইসিডিডিআর,বির ক্লিনিক্যাল ফেলো ডা. সাজ্জাদুল হক বলেন, "ঈদ উপলক্ষে আমাদের হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও এখন আবার রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। সামনের দিনে রোগীর সংখ্যা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যখনই গরমকাল শুরু হয় তখনই এই রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে শুরু করে।"