‘৩০০ টাকা মজুরি আদায় না করে ঘরে ফিরবো না’
মজুরি বাড়িয়ে ৩০০ টাকা না করা হলে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন চা শ্রমিকরা।
আজ (২১ আগস্ট) দুপুরে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের সময় সিলেটের আলী বাহার চা বাগানের শ্রমিক মোশাহিদ আলী বলেন, ৩০০ টাকা মজুরি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না, একবার যখন রাজপথে নেমেছি, তখন দাবি আদায় করেই ছাড়ব'।
সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে সড়কও অবরোধ করেন শ্রমিকরা। এরমধ্যে হবিগঞ্জের মাধবপুরে প্রায় চার ঘণ্টা সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন।
আজ বেলা ১১টায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুরের চৌমুহনীর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর এলাকায় তেলিয়াপাড়া, সুরমা, নোয়াপাড়াসহ লস্করপুর ভ্যালির ২৩টি বাগানের কয়েক হাজার চা-শ্রমিক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং মহাসড়ক অবরোধ করেন।
প্রায় চার ঘণ্টা পর বেলা ৩ টায় দুইদিনের আলটিমেটাম দিয়ে মহাসড়কের অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকরা। দুই দুইদিনের ভেতরে তাদের দাবি না পূরণ হলে আবার মহাসড়কে নামবেন বলে জানিয়েছেন।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের লস্করপুর ভ্যালির সাধারণ সম্পাদক অনুরুদ্ধ বাড়াইক বলেন, আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। তাই কোন ধরণের ঝামেলা আমরা পছন্দ করি না। কিন্তু পেটের দায়ে আমাদেরকে রাস্তায় নামতে হয়েছে। আমরা দুইদিনের জন্য সরকারকে সময় দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে ২৪ আগস্ট আবারও রাস্তায় নামতে বাধ্য হব।
সিলেটেও দুপুরে প্রায় এক ঘণ্টা ওসমানী বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করেন চা শ্রমিকরা। পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করেন। এরপর মালনীছড়া বাগানের মন্ডপের পাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন তারা।
মালনীছড়া চা বাগানের শ্রমিক কাজল হাজরা বলেন, আজকে আমরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেছি। কিন্তু আজকের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হলে কাল সকাল থেকে আবার সড়ক অবরোধ করবো।
এর আগে গতকাল শনিবার মধ্যরাতে এক ভিডিও বার্তায় আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রিয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, 'বিকেলে শ্রম অধিপ্তরের সঙ্গে আমরা বৈঠকে বসি। সেখানে আমাদের মজুরি ২৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয় এবং প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষে ফিরে আমাদের সঙ্গে বসবেন জানিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেই, আমি কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করিনি।'
তিনি বলেন, 'বৈঠক শেষে বেরিয়ে চা শ্রমিকদের ক্ষোভ আঁচ করতে পারি। তারা ২৫ টাকা মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান।
গতকাল বৈঠক শেষে শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানান। তবে নেতাদের এই সিদ্ধান্ত জানানোর পরই ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ চা শ্রমিকরা। এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। তারা ২৫ টাকা মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। পরে রাতে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা নিজেদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
ধর্মঘটের ৮ দিনের মাথায় গতকাল শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ে শ্রম অধিপ্তর ও সরকারের প্রতিনিধির সাথে বৈঠকে বসেন চা শ্রমিক নেতারা।
তবে শ্রমিকদের মধ্যে বহিরাগত ঢুকে পরেছে অভিযোগ করে চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, "শ্রমিকদের দাবির সাথে আমরাও একমত। তবে তাদের মধ্যে বহিরাগতরা ঢুকে পরেছে। তারা ইন্ধন দিচ্ছে। ফলে শ্রমিকরা আমাদের কথা শুনছে না। ফলে যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে।"