চট্টগ্রামে বস্তিতে গুলি: প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে ঢাকা যাওয়ার পথে গ্রেপ্তার ৬১
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সালিমপুরের আলী নগর-ছিন্নমূল বস্তি এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান ও পুলিশের গুলির ঘটনা প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে ঢাকা যাওয়ার পথে বস্তির ৬১ বাসিন্দাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সন্ধ্যার পর মুচলেকা নিয়ে ৩৯ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়, বাকিরা এখনো থানা হেফাজতে আছে।
জঙ্গল সলিমপুর ছিন্নমূল বস্তির বাসিন্দারা দুটি বাসে করে ঢাকা যাওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সীতাকুণ্ড পৌর সদরের বাইপাস এলাকা থেকে যাত্রীবাহি দুটি বাস আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। যাত্রীদের মধ্য থেকে ৬১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৩ জনের নাম জানতে পেরেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। তারা হলেন- মাদরাসা শিক্ষক এস্তেফাজুর রহমান (৫৫), ফরহাদ মিয়া (৮০), আবদুল বারেক (৬৫), মো. জাবেদ (৬৮), নজরুল ইসলাম (৫১), মো. আব্দুর রব (৫৪), মো. ইদ্রিস মিয়া (৬১), মো. আজিজ (৫০), দেলোয়ার হক (৫০), মো. মিজানুর রহমান (৫৮), ওয়াহিদুর রহমান (৬২) ,মো. মুজিবুর রহমান (৪২), মো. ফারুক (৩৯), মো. হাফিজ (২১), মো.বাচ্চু (৩৪), মো. হেলাল উদ্দিন (৪২), মো. ফরিদ (৩৭), মোহাম্মদ মামুন (৩৫), মো. আবদুল হাই (৩৯), মো. আসহাবউদ্দিন (২২), মো. মহিউদ্দিন (৩৮), নাজির আহমেদ (৪০), রুহুর কাদের (৪২), আবদুর রহিম (৩৫), মো. ফিরোজ আলম (২৮), মো. শাহজাহান (৩৭), মো. হারুনর রশিদ (৪৭), আবদুর রশিদ (৪২), আবদুল কাদের (৩৭), মো. মোসলেম উদ্দিন (৪১), মো. মিলন (৩৯), আয়ুব উদ্দিন (৩৬), মো. ইউনুছ (৪০)।
জঙ্গল সালিমপুর ছিন্নমূল বস্তির বাসিন্দা মিজানুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'বৃহস্পতিবার জঙ্গল সালিমপুরের আলী নগর-ছিন্নমূল বস্তি এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। এর আগে প্রায় একমাস জঙ্গল সালিমপুরকে বিদু্ৎ বিচ্ছিন্ন রাখে স্থানীয় প্রশাসন। খাবার ও জ্বালানীবাহী গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না।
'এ কারণে আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছিলাম। এসব বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে দুটি বাসে বস্তির ৬৩ জন বাসিন্দা ঢাকা যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলো। কিন্তু প্রতিমধ্যে সীতাকুণ্ড পৌর এলাকায় বাস দুটি জব্দ করে যাত্রীদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আটককৃতদের একেকজনকে সাত থেকে আটটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে থানা সূত্রে জেনেছি", বলেন মিজানুর।
তবে পুলিশের দাবি আটককৃতরা সবাই একাধিক মামলার আসামি। সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক টিবিএসকে বলেন, 'জঙ্গল সলিমপুর থেকে কিছু মানুষ দুটি বাসে করে ঢাকা যাচ্ছে এমন খবরের ভিত্তিতে রাত দেড়টার দিকে অভিযান চালিয়ে শান্তি পরিবহন ও পাহাড়িকা পরিবহনের দুটি বাস জব্দ করা হয়।
'বাসগুলো থেকে সর্বমোট ৬৩ জনকে আটক করা হয়। যাচাই-বাছাই করে ৬১ জনকে মামলার আসামি হিসেবে চিহ্নিত করে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।'
এদিকে জঙ্গল সলিমপুর ছিন্নমূল বস্তির বাসিন্দাদের একটি দল পুলিশের বাঁধা এড়িয়ে ঢাকা পৌঁছায়। সেখানে রোববার দুপুরে ঢাকা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছিন্নমূল বস্তির ২৪ হাজার পরিবারকে পূর্নবাসনের আবেদন জানিয়েছে। পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসন হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে ও পুলিশ বিনা উস্কানিতে বস্তিবাসির উপর গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুরে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
চট্টগ্রাম শহর লাগোয়া সীতাকুণ্ড উপজেলার ৮৫০ একর জমিতে গড়ে ওঠা ছিন্নমূল বস্তিতে প্রায় এক লাখ মানুষের বসবাস। যাদের বেশিরভাগই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অভ্যন্তরীণ অভিবাসনে বাধ্য হওয়া জনগোষ্ঠী। তারা এখানে রয়েছে ২০০৪ সাল থেকেই। সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এই বিপুল বস্তিবাসিদের সড়িয়ে সেখানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, নভোথিয়েটার, স্পোর্টস ভিলেজ হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, জাতীয় তথ্যকেন্দ্র ও নাইট সাফারি পার্কসহ একাধিক সরকারি অফিস তৈরীর ঘোষণা দিয়েছে।
৮৫০ একর এ জমিতে গড়ে ওঠা এই বস্তির বাসিন্দা প্রায় এক লাখ মানুষ, তাদের বেশিরভাগই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অভ্যন্তরীণ অভিবাসনে বাধ্য হওয়া জনগোষ্ঠী। ২০০৪ সাল থেকেই এখানে থাকনে তারা।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এই বিপুল সংখ্যক বস্তিবাসীকে সড়িয়ে সেখানে নাইট সাফারি পার্ক, কারাগার, জাতীয় তথ্য কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সরকারি অফিস তৈরির ঘোষণা দিয়েছে।
গত ২০ আগস্ট সেখানকার বাসিন্দাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজ দায়িত্বে স্থাপনা ও মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিতে আল্টিমেটাম ঘোষণা দেওয়া হয়।
এরই অংশ হিসেবে ২২ জুলাই থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত নয়টি অভিযানে জঙ্গল সলিমপুরের ১৭০ টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। ২৪ জুলাই জঙ্গল সলিমপুরের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
২৩ আগস্ট ভূমির স্থায়ী বন্দোবস্ত ও পানি-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দারা। এসময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় প্রশাসনের দায়ের করা ছয়টি মামলায় অন্তত এক হাজার স্থানীয় বাসিন্দাকে আসামি করা হয়।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার জঙ্গল সালিমপুরের আলী নগর-ছিন্নমূল বস্তি এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে বস্তিবাসীদের বাধার মুখে পড়ে অভিযানকারী দল। এরপর পুলিশের রাবার বুলেট ও গুলির আঘাতে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ নতুন দুটি মামলা দায়ের করে।
গত শুক্রবার গুলিতে আহত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাঁচজনকে ওইসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। শনিবার রাতে আটক ৬১ জনকেও পূর্বের ছয়টিসহ মোট সাত থেকে আটটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।