জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়: স্বাভাবিক মাত্রায় বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় লোডশেডিং চলছেই
ঢাকা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামে, পুরো দেশের মানুষই প্রতিদিন তিন থেকে চার ঘণ্টার লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন। মঙ্গলবারের জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের পর এখনও বিদ্যুতের সরবরাহ আগের মাত্রায় উঠেনি।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) মুখপাত্র মো. শামীম হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ৪ অক্টোবরের ব্ল্যাকআউটের পর থেকে যেসব এলাকায় বিদ্যুতের ওভারলোড দেখা যাচ্ছে সেসব এলাকায় সতর্কতার অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করছে কর্তৃপক্ষ।
গ্যাস সরবরাহের ঘাটতির জন্য কমেছে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন।
অন্যদিকে, উচ্চ উৎপাদন ব্যয়ের কারণে সরকার তরল তেল-ভিত্তিক প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ায়নি।
এ কারণেই দেশের জনগণ দীর্ঘক্ষণ লোডশেডিং এর শিকার হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, বাংলাদেশের পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি গত ৪ অক্টোবরের ব্ল্যাকআউট তদন্তের জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।
এ কমিটির শুক্রবার (৭ অক্টোবর) প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা প্রতিবেদন জমা দেয়নি বলে জানিয়েছেন কমিটির এক সদস্য।
কমিটির সদস্য ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী বলেন, কমিটিকে অনেক জটিল বিষয় তদন্ত প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নির্ধারিত তিন দিনের মধ্যে এ কাজ শেষ করা সম্ভব নয়।
এ বছরের ১৮ জুলাই শক্তি সঞ্চয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে চাপ কমানোর জন্য নেওয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিডিউল অনুযায়ী লোডশেডিং অব্যাহত থাকবে বলে জানায় সরকার।
এদিকে, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সারাদেশে দীর্ঘক্ষণ ধরে লোডশেডিং রেকর্ড করা হয়েছে।
গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ১৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন, কিন্তু সরবরাহ ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কম বলে জানিয়েছে বিপিডিবি কর্মকর্তারা।
বর্তমানে, পেট্রোবাংলা তাদের গ্রাহকদের জন্য প্রতিদিন মোট ২৬৬৬.৬ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে, যা গত জানুয়ারিতে ছিল প্রায় ৩১০০ ঘনফুট। বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছে।
তাই প্রতিদিনই তীব্র লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং নিকটবর্তী নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ছয়টি বিতরণ কোম্পানির মধ্যে একটি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি; প্রতিদিন প্রায় ৪৫০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিংয়ের সম্মুখীন হচ্ছে কোম্পানিটি।
এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, কোম্পানিটি ১৪৫০ মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে মাত্র ৯৫০ মেগাওয়াট পাচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, উত্তরা এবং টঙ্গীতে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কাউসার আমীর আলী বলেন, তারা দৈনিক ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছেন, যেখানে তাদের চাহিদা ১১৪০ মেগাওয়াট।
এদিকে, দেশে বিদ্যুৎ বিতরণকারী সবচেয়ে বড় কোম্পানি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডও পাওয়ার গ্রিড থেকে প্রয়োজনীয় সরবরাহ পাচ্ছে না। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৮০টি সমিতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে তারা।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড অপারেশন) দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, কোম্পানিটির দৈনিক ৮,৬০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও তারা পাচ্ছে মাত্র ৭,৫০০-৮,০০০ মেগাওয়াট।
তাই বিভিন্ন জেলার মানুষ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে না বলে জানান তিনি।