সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে পুলিশ-আ.লীগ সম্মিলিতভাবে কাজ করছে : বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান
২২ অক্টোবর খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক শামসুজ্জামান দুদু।
তিনি বলেন, "আমাদের শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচি সফল করতে পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা উস্কানিমূলক আচরণ না করে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহবান জানাই।"
শুক্রবার (২১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর কে ডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে বিএনপি খুলনা বিভাগ আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, "পুলিশের গণ গ্রেপ্তার অভিযানে নগরী থেকে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সমাবেশে না যাওয়ার জন্য কঠোর হুমকি প্রদান করছে। সমাবেশে গেলে পরিণত অশুভ হবে বলে হুংকার ছাড়ছেন তারা।"
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, "সমাবেশকে বানচাল করতে গোটা বিভাগ জুড়ে ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করা হয়েছে। পরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। লঞ্চ ঘাট, ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাহলে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, বাগেরহাট, নড়াইল থেকে কি বিএনপির নেতাকর্মীরা পায়ে হেঁটে আসবেন? বা নদী সাঁতরে খুলনায় আসবেন? এ কেমন মানসিকতা?"
"স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের নারী, পুরুষ, শিশু বুকের রক্ত দিয়েছিলেন। সেই দেশের এমন পরিস্থিতি হবে কেন?" বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, "বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় একাত্তরে রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। গতকাল রাতে তিনি যেখানে অবস্থান করছিলেন, পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে পুলিশ রীতিমতো অপমান করেছে। এমন অপমানের মুখোমুখি তাকে হতে হবে কেন?"
অন্য বিভাগীয় সমাবেশের অনুমতি প্রদানে প্রশাসন কালক্ষেপন করলেও খুলনার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে জানিয়ে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, "খুলনায় অনুমতি চাওয়া মাত্র প্রশাসন তা দিয়েছে। এ জন্য দলের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। কিন্ত তারপর থেকে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রশাসনকে বলবো, যা হয়েছে হয়ে গেছে। এবার এসব বন্ধ করুন। আমাদেরকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দিন। উস্কানি না দিয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন।"
"শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা এই শহরে থাকেন। এই শহর হবে শান্তির," মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, আগামীকাল দুপুর ২ টায় সমাবেশ শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
"এ সমাবেশ দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ডাকা হয়েছে। জনদাবির সমর্থনে আন্দোলনে শহীদ পাঁচ সহকর্মী হত্যার বিচারের দাবিতে এই সমাবেশ। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে, জ্বালানি তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর দাবিতে ডাকা হয়েছে এ সমাবেশ।"
এদিকে দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন থানায় অর্ধশত নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।
তাদের মধ্যে রয়েছেন খুলনা সদর থানায় খন্দকার হাসিনুল ইসলাম নিক, মিজানুর রহমান বাবু, বেল্লাল হোসেন, জসমিউদ্দিন লাবু, শফিকুল ইসলাম, মিজান ও কবির ফরাজি, সোনাডাঙ্গা থানায় নজরুল ইসলাম, ডালিম, ডা. শাহ আলম, মাহমুদ আলম বাবু মোড়ল, জুলু, কাজী সেলিম, খালিশপুর থানায় মেহেদী, সামাদ বিশ্বাস, গোলাম মোস্তফা ভূট্টো, মোঃ হাসান, মোল্লা কওসার, দৌলতপুর থানায় হুমায়ুন কবির, রাসেলুজ্জামান, খানজাহান আলী থানায় জসীম ভূইয়া, মামুন ও উজ্জল এবং হরিণটানা থানায় কামাল, হেলাল ও হযরত আলী।
এছাড়া বাগেরহাট থেকে আগত ৪ জনকে খুলনা থানা পুলিশ এবং মোড়েলগঞ্জ বিএনপি নেতা খায়রুজ্জামান শিপনের বাসা হতে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে গভীর রাতে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীবাহী একটি গাড়ি সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জাহাঙ্গীর মুন্সি, কুষক দল আহবায়ক মুকুল মেম্বারসহ ১১ জন রয়েছেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
তবে খুলনা সদর থানার ওসি হাসান আল মামুন বলেন, "পুলিশ কাউকে হয়রানিমূলক ভাবে গ্রেপ্তার করছে না। তারা শান্তি শৃঙ্খলা রাখার জন্য কাজ করছে। বিএনপির কাউকে বিনা পরোয়ানাতে গ্রেপ্তার করা হয়নি।"
ব্রিফিংয়ের সূচনায় নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, "বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, অব্যাহত হুমকি প্রদর্শন করছে। আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে রামদা হকিষ্টিকসহ অস্ত্রের মহড়া চালাচ্ছে।"
তিনি বলেন, "এসব কাজের পরিণতি শুভ হবেনা।"
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ প্রচার সম্পাদক কৃষিবীদ শামীমুর রহমান শামীম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, মহানগর বিএনপির আহবায়ক শফিকুল আলম মনা, জেলা আহবায়ক আমীর এজাজ খান, জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, নগর সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোঃ তারিকুল ইসলাম জহীর ও জেলার আবু হোসেন বাবু।