নিরাপদ সড়ক দিবসে পরিবহন ধর্মঘট, চরম ভোগান্তিতে দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীরা
আজ (২২ অক্টোবর) জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। সড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি দূর এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর দিনটি জাতীয় পরিসরে পালিত হয়ে আসছে। দেশে এবার ষষ্ঠ বছরের মতো উদযাপিত হচ্ছে দিনটি। কিন্তু এ বছরের দিবসটি বিগত ৫ বছরের 'জাতীয় সড়ক নিরাপদ দিবস'-এর মতো নয়। দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলেও এ বছরের দিনটিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত নছিমন, করিমন, মহেন্দ্র এবং ইজিবাইকের মতো হাল্কা পরিবহনে চেপে গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছেন খুলনা এলাকার সাধারণ যাত্রীরা।
শনিবার (২২ অক্টোবর) খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সকাল থেকেই এ এলাকায় শুরু হয়েছে দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘট। কোনো এলাকা থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া বাসগুলো শেষ পর্যন্ত আর পৌঁছাতে পারছে না খুলনায়। এমনকি খুলনা থেকেও ছেড়ে আসছে না কোনো গণপরিবহন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এই রুটের যাত্রীরা।
নছিমন-করিমনের মতো তিন চাকার হাল্কা পরিবহনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের। ভেঙে ভেঙে যাওয়ায় গুনতে হচ্ছে বেশি ভাড়া। অনেকেই আবার গন্তব্যে না যেতে পেরে যশোর থেকেই ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রুটগুলোর যাত্রীবাহী বাসের শেষ গন্তব্যস্থান হলো খুলনার সোনাডাঙা বাস টার্মিনাল। বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ডাকা দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘটের কারণে খুলনাগামী যাত্রীবাহী বাসগুলো সোনাডাঙা বাস টার্মিনালে প্রবেশ না করে জড়ো হচ্ছে যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে।
এদিকে, খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি জানিয়েছে সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয় বরং উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়কে র্দীঘদিন ধরে অবৈধভাবে নছিমন, করিমন, মহেন্দ্র ও ইজিবাইক চলাচল করার প্রতিবাদে বাস চলাচল বন্ধ করেছেন তারা। সমিতির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০ অক্টোবরের মধ্যে প্রশাসন এগুলি বন্ধ না করায় ২১ ও ২২ অক্টোবর খুলনার সকল রূটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
তবে, যে কারণেই বাস বন্ধ থাকুক এতে সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে তাদের নামতে হচ্ছে যশোরে।
শুধু বাস ও মিনিবাসই নয়, দুইদিনের ধর্মঘট পালন করছে খুলনার লঞ্চ ও রূপসার মাঝিরাও। শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো, ভৈরব থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত নদী খনন, ভারতগামী জাহাজের ল্যান্ডিং পাসসহ ১০ দফা দাবিতে শুক্রবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করছেন যাত্রীবাহী লঞ্চ শ্রমিকরা। এতে দুইরুটে ৬টি লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
লঞ্চ শ্রমিকদের পাশাপাশি জনপ্রতি ১ টাকা ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে খুলনার রূপসা নদীর ইঞ্জিন চালিত নৌকা মাঝি সংঘ। শনিবার (২২ অক্টোবর) সকাল থেকে ২৪ ঘণ্টা ঘাঁট পারাপার বন্ধ রেখেছেন মাঝিরা।
সড়ক পরিবহনের পাশাপাশি নৌযানের ধর্মঘট যাত্রীদের ভোগান্তি যেন চরমে নিয়ে গেছে। আর এই সড়ক ও নৌযান বন্ধের বাড়তি চাপ গিয়ে পড়েছে খুলনা অঞ্চলের রেলপথে। গণপরিবহনের আরেক মাধ্যম ট্রেনেও দেখা দিয়েছে টিকিট সংকট।
যাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়েছেন খুলনা রুটের মোটর শ্রমিকরাও। খুলনায় জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণায় একাত্মতা প্রকাশ করেছেন খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। এতে দুইদিনের জন্য কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার মোটর শ্রমিক।
শুক্রবার খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা অধিকাংশই আড্ডা দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। তারা জানান, ধর্মঘটের কারণে দুইদিন আয় বন্ধ থাকবে তাদের। কারণ বাস না চললে মালিকপক্ষ তাদের বেতন দেয় না। ফলে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে তাদের।
তারা জানান, শ্রমিকরা কখনোই চায় না বাস বন্ধ থাকুক। কিন্তু বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন মালিকরা। আর এতে পেটের দায়ে পড়েন শ্রমিকরা।
তবে, একযোগে প্রায় সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধের পিছনে বাস-লঞ্চ-মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের কাছে ভিন্ন ভিন্ন যুক্তি থাকলেও বিএনপি নেতারা বলছেন, খুলনায় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করেই ক্ষমতাসীন সরকার পরিবহন বন্ধ করিয়েছে। এরপরেও বিভিন্ন উপায়ে যাত্রা নিশ্চিত করে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন হাজার হাজার নেতাকর্মী।
আজ জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসে যাত্রীদের নিরাপত্তার সঙ্গে গন্তব্যে পৌঁছানোর দাবি থাকলেও দেশের একাংশে যে সাধারণ জনগণের এই মানবিক চাওয়া উপেক্ষিত হয়েছে, সেটি বলার অপেক্ষা রাখেনা। যেখানে দিনটিতে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও দুর্ভোগ-দুর্ঘটনা কমানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা, সেখানে খুলনা অঞ্চলের যাত্রীদের দুর্ভোগ দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং রাজপথে এর প্রভাবের চিত্রই তুলে ধরেছে।