জাল নোট তৈরির চক্রের মূলহোতাসহ চারজন গ্রেপ্তার
জাল নোট তৈরির চক্রের মূলহোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৪)।
গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানিয়েছে, চক্রটি প্রায় এক বছর ধরে ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, খুলনা ও যশোরসহ বিভিন্ন এলাকায় জাল নোট তৈরি করে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করতেন। এছাড়া, নিজেরা বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং দোকান, মাছের আড়তসহ জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় জাল নোট ব্যবহার করতেন।
শনিবার (২২ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর চকবাজার, সিরাজগঞ্জ সদর এবং খুলনার খালিশপুর থানা এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মূলহোতা মাউন হোসেন সাব্বির (২১), পারভেজ (২০), তারেক (২০) ও শিহাব উদ্দিন (২০)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা মূল্যের জালনোট, ১টি ল্যাপটপ, ১টি প্রিন্টারসহ জাল নোট তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।
রোববার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ইউটিউব-ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে চক্রটি জাল টাকা তৈরি ও ব্যবসার প্রতি আকৃষ্ট হন। 'জাল টাকা প্রতারক চক্র বিরোধী পোস্ট' নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে গ্রেপ্তার বাকিদের সঙ্গে পরিচয় হয় চক্রের হোতা সাব্বিরের। পরবর্তীতে তিনি জাল নোটের খুচরা ব্যবসার পরিকল্পনা করেন।
পরে ফেসবুকে অপর একটি জাল নোট তৈরি চক্রের সঙ্গে সাব্বিরের পরিচয় হয়। সেই চক্রের কাছ থেকে তিন লাখ টাকার জাল নোট কিনতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৩৫ হাজার টাকা পাঠান সাব্বির। কিন্তু টাকা নিয়ে তাকে জাল নোট সরবরাহ করেনি চক্রটি। প্রতারিত হয়ে নিজেই জাল নোট তৈরিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন সাব্বির। সে অনুযায়ী মেসেঞ্জারে 'এক্স-ম্যান' নামে একটি গ্রুপ খুলে তারা জাল টাকা তৈরি-ব্যবসার বিষয়ে তথ্য আদানপ্রদান করতে থাকেন।
গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে কাজ করতেন শিহাব। তার মাধ্যমে গ্রেপ্তার পারভেজ এবং তারেকের সঙ্গে সাব্বিরের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে সাব্বির ইউটিউব, ফেসবুক এবং গুগল থেকে জাল নোট তৈরির বিভিন্ন বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান অর্জন করেন। জমানো টাকা দিয়ে জাল নোট তৈরির জন্য ল্যাপটপ, প্রিন্টার, প্রিন্টিং ডাইস, কাগজ, টিস্যু পেপার ও প্রিন্টারের কালিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি ক্রয় করেন সাব্বির।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ব্যবসা রমরমা থাকলে চক্রটি দৈনিক দুই লক্ষাধিক টাকা মূল্যমানের জাল নোট তৈরি করে বাজারে ছাড়ত। ফেসবুক গ্রুপ 'জাল টাকা প্রতারক চক্র বিরোধী পোস্ট' এর কমেন্টস দেখে তারা বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট তৈরি করে বিক্রি করতেন জাল টাকা। চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে ঢাকাসহ সিরাজগঞ্জ, খুলনা, যশোর এলাকায় এই টাকা সরবরাহ করতেন তারা।
সরাসরি দেখা না করে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিতেন চক্রের সদস্যরা। প্রতি লাখ জাল টাকা বিক্রি করতেন ১৫-২০ হাজার টাকায়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, জাল নোট তৈরি ও বাজারজাতকরণের জন্য ঢাকাকে নিরাপদ ও সহজ স্থান বলে মনে করত চক্রটি। তারা বিভিন্ন মেলা, উৎসব, পূজা, ঈদে পশুর হাটে ও অধিক জনসমাগমপূর্ণ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন কৌশলে জাল নোট ব্যবহার করত।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে জাল নোট প্রিন্টের পর কাগজের অব্যবহৃত ও নষ্ট অংশগুলো পুড়ে ফেলত। তারা বিভিন্ন সময়ে প্রায় দুই কোটি মূল্যমানের জাল নোটের ব্যবসা করেছে বলে জানা গেছে।
চক্রটির অন্যতম হোতা মাউন হোসেন সাব্বির। আর এই চক্রে আরও ১৫-২০ জন সদস্য জড়িত রয়েছেন। কম সময়ে অল্প পুঁজিতে ধনী হতে তারা এই প্রতারণার পথ বেছে নেন।