ধানমন্ডি লেকে হত্যাকাণ্ড: লোডশেডিংয়ে ফুটেজ না থাকায় তদন্তে অসুবিধা
রাজধানীর ধানমন্ডি লেকের রবীন্দ্র সরোবর থেকে শাহাদাত হোসেন মজুমদার (৫১) নামে এক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে ছিনতাইকারীরা শাহাদাতকে খুন করেছে। তবে ঘটনাস্থলের স্পষ্ট সিসিটিভি ফুটেজ না থাকায় কোন ক্লু পাচ্ছে না পুলিশ।
নিহত শাহাদাতের স্বজনেরা জানিয়েছেন, সে প্রতিদিনের মতো শনিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডি লেকে হাঁটতে বের হন। তবে রাত ১২টায়ও না ফেরায় তাকে খুঁজতে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। পরে রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ জানায়, রবীন্দ্র সরোবরের পাশে এক ব্যক্তির লাশ পড়ে আছে। তখন সেখানে গিয়ে তার রক্তাক্ত দেহ পাওয়া যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, তার দেহে একাধিক ক্ষত ছিলো। ঘটনাস্থলের খুব কাছেই একটি ছুরি পড়ে ছিল। তার সাথে থাকা মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ পাওয়া যায়নি। তার প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে ছিনতাইকারীরা শাহাদাতকে খুন করেছে। জানা যায়, এ ঘটনায় মো. হৃদয় নামে এক তরুণসহ একাধিক সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্তসংশ্লিষ্টরা। হৃদয়ের নামে অন্তত পাঁচটি ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে। তবে তাকেসহ অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদে কোন ক্লু পায়নি তারা।
তদন্তের এ পর্যায়ে শাহাদাতের ব্যক্তিগত তথ্য, হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনের অবস্থান এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হচ্ছে। তার ব্যক্তিগত তথ্য পর্যালোচনা করে এখনো কোন তথ্য মেলেনি অন্যদিকে মোবাইল ফোনটির লোকেশনও পাওয়া যায়নি। এ ধরণের হত্যাকাণ্ডে অপরাধীকে শনাক্তের অন্যতম মাধ্যম ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা। তবে এ ঘটনায় স্পষ্ট ফুটেজ না পাওয়ায় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছে পুলিশ।
ধানমন্ডি মডেল থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া টিবিএসকে বলেন, ঘটনার সময় ওই এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখা যায়নি। আশপাশে একাধিক সিসিটিভি দেখা হয়েছে তবে সেখানে স্পষ্ট কিছু পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, পর্যাপ্ত আলো থাকলে হয়তো এখানে এ ধরণের হত্যাকাণ্ড হতো না, হলেও সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করা সহজ হতো।
রাতে বন্ধ থাকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার লাইট
হাতিরঝিলের বিভিন্ন অংশে লাইট বন্ধ থাকছে বিদ্যুৎ থাকলেও। গত সপ্তাহে পুলিশ প্লাজা অংশ থেকে রামপুরা পর্যন্ত সড়কের লাইটগুলো বন্ধ থাকতে দেখা যায় রাত ১১টার দিকে। এই পথে নিয়মিত যাতায়াতকারী আব্দুর রব টিবিএসকে বলেন, হাতিরঝিলের একাধিক পয়েন্টে এভাবে লাইট বন্ধ থাকছে। এমনিতেই লোডশেডিংয়ে দীর্ঘ সময় ধরে অন্ধকার থাকে এরপরও এভাবে লাইটগুলো বন্ধ রাখায় নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। প্রায় সময় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে এসব এলাকায় ফলে আতংক নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে প্রতিদিন।
হাতিরঝিলে এভাবে লাইট বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প ও নকশা) এ.এস.এম. রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, 'আমি বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখবো।'
এভাবে রাজধানীর গুলশান-উত্তরার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ অন্য এলাকাগুলোর বিভিন্ন সড়কের লাইট বন্ধ থাকছে। ফলে তৈরি হয়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। এছাড়াও দীর্ঘ সময় ধরে লোডশেডিংয়ে রাজধানীর সব এলাকায় প্রতিনিয়তই চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে চলেছে।
লোডশেডিংয়ের কারণে চুরি-ছিনতাই বা অন্যান্য অপরাধ প্রবণতা বাড়ার আশংকা করে আগে থেকেই এলাকাভিত্তিক টহল জোরদারের জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলো ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
তবে এ নির্দেশনার পরও ডিএমপির থানাগুলোর টহল জোরদারের তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। জানতে চাইলে একাধিক কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেছেন, টহল বাড়িয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে এলাকাগুলো নিরাপদ রাখার। কিন্ত একসাথে যখন পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায় আমাদের পক্ষে সবখানে দাঁড়িয়ে থেকে নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। আবার আমাদের জনবল সংকট রয়েছে চাইলেই সবাই শুধু টহলে মনোযোগ দিতে পারি না।